রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় উৎসবের সমাবেশকে ঘিরে সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সদস্যরাও মাঠে আছে।
শনিবার ভোর থেকেই এ এলাকায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ-র্যাব-ডিবি-সাদাপোশাকে পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার বিপুল পরিমাণ সদস্য।
প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি চালিয়ে নেতাকর্মী ও মানুষকে ভেতরে প্রবেশ করানো হবে। অনুষ্ঠানস্থলে আগত ব্যক্তিদের কোনো প্রকার হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, দাহ্য পদার্থ বা ধারালো কোনো বস্তু বহন না করাসহ কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পরবর্তী এই বিজয় উৎসবে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সমাবেশ থেকে সমৃদ্ধির যাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি-মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা আসতে পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশেপাশের এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্ত্বর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা এলাকা ঘুরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে, তাদের সঙ্গে আছে এপিসি, জলকামান ও রায়টকার।
এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও সতর্কাবস্থায় আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিজয় উৎসবকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিশেষ পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও পুরো সমাবেশ এলাকায় সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আছে, কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
‘ডিএমপির পক্ষ থেকে ডগ স্কোয়াড ও মেটাল ডিটেকটর দিয়ে উৎসবস্থল স্যুইপিং করানো হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তায় অংশ নিয়েছে র্যাবের টহল টিমও। সাথে দেখা গেছে ডগ স্কোয়াডকে। নিরাপত্তা যাতে কেউ বিঘ্নিত করতে না পারে সেজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশেপাশের এলাকাগুলোর সড়ক দিয়ে যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বলেন, বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির যাতায়াত উপলক্ষে আজকে ভোর থেকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশের বিভিন্ন ইন্টারসেকশন যেমন- বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ, কাটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশীবাজার, চাঁনখারপুল, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টু রোড ক্রসিংগুলো থেকে গাড়ি ডাইভারশন দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এলিট ফোর্স র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে বিজয় উৎসবে যাতে কেউ কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য রাজধানীতে বিপুল পরিমাণ র্যাব সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।
র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিজয় উৎসবের সমাবেশস্থলে আমাদের ওয়াচ টাওয়ার আছে, সেখান থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় ছয়টি পেট্রোল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।
দুপুর আড়াইটায় এই মহাসমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশস্থলে বেলা ১১টা থেকে প্রবেশ করতে শুরু করেছে নেতাকর্মীরা। এবারের মহাসমাবেশে সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য গেটের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা গেটের ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাঠের ভেতরের পুকুরের পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের ওপরে লেখা ‘সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা’। দক্ষিণমুখী মঞ্চের সামনের মাঠে তৈরি করে রাখা হয়েছে ছোট ছোট নৌকা।
এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের তথ্যসংবলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার লাগানো হয়েছে।
সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের রয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। সমাবেশটি মহাসমুদ্রে রূপ দিতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন ও ঢাকা মহানগরের দলীয় নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।