দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিভিন্ন অগ্রগতির সূচকের দেশের সার্বিক অবস্থার একটি পরিস্কার উন্নতি লক্ষ্য করা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ে ভারাক্রান্ত দেশ। নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ ও অতীত-বর্তমানের দুর্নীতির জের টানতে হচ্ছে সবাইকে। এবছরে ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট, বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাকের আইনের শাসন বিষয়ক সূচকে পরিস্থিতির নিম্নমুখীতা উঠে এসেছে। এতো অগ্রগতির সঙ্গে কেনো এই নিম্নমুখীতা, এর জবাব খুঁজে ফেরা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, আইনের শাসনের অব্যবস্থা আর অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতির কারণে এই অবস্থা। আর এই অবস্থা ম্লান করে দিচ্ছে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অর্জনকে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী গণতন্ত্র আছে, আইন আছে, শাসনও আছে, কিন্তু আইনের শাসন কি আছে? আইন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র– এই তিন শব্দ আলাদা হলেও একটি ছাড়া অন্যটি মূল্যহীন। অপরাধ করে প্রভাবশালীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বা যায়, এরকম ধারণা থেকে দেশের জনগণের মধ্যে যেমন হতাশা তৈরি হয়, তেমনি অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় আইনের শাসন না থাকলে জনগণ বঞ্চিত হয়, শোষিত হয়, নিপীড়িত-নির্যাতিত হয় এবং হতে হতে একদিন ফুঁসে উঠে।
তবে গত কয়েকদিনে আলোচিত কিছু ঘটনা কিছুটা স্বস্তির সুবাতাস নিয়ে এসেছে। উল্লেখ করার মতো সেসব ঘটনা হচ্ছে, কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুর রহমান বদি’র ৩ বছরের কারাদণ্ড, অস্ত্র মহড়ার দায়ে ছাত্রলীগের দুই নেতার বহিষ্কার ও দুদক কর্তৃক বহুল আলোচিত হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম আটক। দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, কিন্তু অপরাধ করে বিচারিক আদালতে যাওয়ার আগেই অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে তথ্য-প্রমাণ-প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে পার পেয়ে যাওয়ার চলমান সংস্কৃতির মধ্যে উপরোক্ত ঘটনাগুলি ব্যতিক্রম। অপরাধী সে যেই হোক, আইন সবার জন্য সমান ও অপরাধ করা পার পাওয়া যাবে না– দেশের জনগণের মধ্যে এই ধারণা ও দৃষ্টান্ত তৈরি করা একান্ত জরুরি।
রাতারাতি এই অবস্থার পরিবর্তন আশা করা বাস্তবসম্মত না হলেও আইনের শাসনের যে সুবাতাস বইছে তা অব্যাহত রাখা জরুরি।