জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত
হয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ব্রিটেনের ধর্মীয় তাত্ত্বিক আনজেম চৌধুরী (৪৯)। আদালতে শুনানির পর
ব্রিটেনের সন্ত্রাসবাদ আইন-২০০০ অনুযায়ী অানজেম এবং তার সহযোগী মোহাম্মদ রহমানকে (৩৩) দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত।
গত মাসে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হলেও ১৬ আগস্টের আগে সেই তথ্য প্রকাশে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ছিল। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার শুনানি হবে।
ঘৃণা ছড়িয়ে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে আনজেম চৌধুরীর এবং মোহাম্মদ রহমানের ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিচারক হলরয়েডও জানিয়েছেন, তাদের ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
আনেজম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ২০ বছর ধরে তিনি ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে বিদ্বেষ, ঘৃণা, সন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন। তার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে কয়েকশ ব্রিটিশ তরুণ-তরুণী আল-কায়েদা ও আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু হত্যা ও সন্ত্রাসী ঘটনার পেছনেও তার ইন্ধন রয়েছে।
নাইন ইলেভেন হামলারে বর্ষপূর্তিতে লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের সামনে দেশটির পতাকা পুড়িয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে উলউইচের সামনে সেনা সদস্য লি রিগবাইয়ের হত্যাকারী মিখায়েল এডিবোলাজো ও ভয়ঙ্কর ইসলামী জঙ্গি ওমর বাকরি মাহমুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখারও অভিযোগ আছে।
শুধু তাই নয়, তিনি ইউটিউবে তার অনুসরণকারীদেরও আইএসকে সমর্থন দিতে উৎসাহ জোগান বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া পৃথিবীতে ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে মুসলমানদের জনসংখ্যা বাড়িয়ে ছয় মিলিয়নে উত্তীর্ণ করতেও আহ্বান জানিয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।
কয়েক বছর আগে তিনি সিরিয়ার জঙ্গি নেতা ওমর বকরি মোহাম্মদের সঙ্গে মিলে মৌলবাদি ধর্মীয় সংগঠন আল-মোহাজিরন প্রতিষ্ঠা করেন। লন্ডনেও বকরির ছিল অবাধ যাতায়াত। জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার তাকে সেদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ গত ২০ বছরের তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণ করে আদালতে উপস্থাপন করেছে। আদালতে কোনো আইনজীবী না নিয়ে নিজেই তার পক্ষে লড়েন এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
আনজেম চৌধুরী লন্ডনের ইলফোর্ডে বসবাসকারী ৫ সন্তানের জনক। তিনি একজন আইনজীবী এবং মুসলিম ল’ইয়ার নামের সংগঠনের চেয়রাম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৪ সালে আইএসের খলিফা আল বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তিনি বলেন, আইএস ঘোষিত ইসলামি খিলাফত হবে সবচেয়ে সুখময়, শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ বাসভূমি। এর পরপরই তার প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয় ব্রিটিশ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। কিছুদিন তাকে নজরদারিতে রেখে পরে আটক করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে আনজেম চৌধুরী মডারেট ইসলামের ধারণার তীব্র সমালোচনা করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন নারী হয় গর্ভবতী, অথবা গর্ভবতী নয়। এর মাঝামাঝি কিছু হতে পারে না। তাই ইসলামেও মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, হযরত মোহাম্মদ (সা.) নিজে যে যে কাজ করেছেন, প্রত্যেক মুসলমানকে তা করতে হবে। হযরত যেগুলো বারণ করেছেন, সেগুলো সব মুসলমানকে পরিত্যাগ করতে হবে।
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের বিরোধীদের হত্যা করতে খোদ হযরত মোহাম্মদ (সা.) ঘাতক পাঠিয়েছেন। তাই ধর্মের প্রয়োজনে মানুষ হত্যা করতে, জিহাদে যোগ দিতে কোনো বাধা নেই-এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যও করেন আনজেম চৌধুরী।
ব্রিটেনের অনেক মুসলিম আনজেম চৌধুরীকে কাভারেজ দেয়া জন্য মিডিয়াকে দোষারোপ করেছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের মিগদাদ ভারসি গার্ডিয়ানকে বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের মুসলমিরা আনজেম চৌধুরীর ধারণার নিন্দা করে আসছে।