বাংলাদেশী অভিবাসন প্রত্যাশী ৬ জনকে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সীমা থেকে উদ্ধার করে একটি জেলে নৌকায় করে আবারও ইন্দোনেশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে জাকার্তা।
এ সময় বাংলাদেশীদের সাথে ইন্দোনেশিয়ার দুইজন নাগরিকও ছিলো, মানবপাচারের অভিযোগে যাদের বিচারের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তবে শরণার্থী বা অর্থনৈতিক অভিবাসীদের পাচার বন্ধ করতে অস্ট্রেলিয়ার এই ধরণের বিতর্কিত পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীদের আরও করুণ চিত্রের সন্ধান পাওয়া যায় মালয়েশিয়ায়। সেখানে পেনাং এর শহর বাটারোর্থে এক পুলিশি অভিযানে রুগ্ন-অসুস্থ অবস্থায় ২৭ জনকে আটকাবস্থা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় উপকূলীয় পুলিশ চিফ টেডি জন সাহালা মার্বুন জানান, ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুপাং থেকে ৬ বাংলাদেশী ও ২ ইন্দোনেশিয়ান ক্রু গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে সমুদ্র পথে যাত্রা শুরু করে। তিন দিন পরে অস্ট্রেলিয়ান সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করা নৌকাটি ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে ডুবতে শুরু করলে অস্ট্রেলিয়ার সীমান্ত টহল দল তাদের উদ্ধার করে।
“অস্ট্রেলিয়ার কাস্টমস জাহাজে কয়েকদিন যাত্রার পর আবারও তাদের ইন্দোনেশিয়ার সীমায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং একটি জেলে নৌকায় কিছু জ্বালানি এবং রসদ দিয়ে তাদের ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা ইস্ট নুসা তেঙ্গারাতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়।”
দুইজন ক্রুকে কুপাংয়ে আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের মামলা দায়ের হতে পারে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৫ বছরের কারাদন্ড। মার্বুন জানিয়েছেন, নৌকাটির নাবিক ইসাই রানো স্বীকার করেছে যে ছয় বাংলাদেশীকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে ৯২ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপি (৭ হাজার ইউএস ডলার) পরিশোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশীরা কিভাবে ইন্দোনেশিয়ার পৌছালো সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা। তবে খুব কমই ইংরেজী জ্ঞান থাকায় বাংলাদেশীদের সাথে যোগাযোগে সমস্যা হচ্ছে বলে মার্বুন জানায়। এছাড়াও অন্যান্য সন্দেহভাজনদের খোঁজা হচ্ছে বলেও জানানো হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে চাওয়া অবৈধ অভিভাসীদের নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ক্যানবেরার এমন কঠোর নীতি এর প্রবাহ কমিয়ে আনতে পারলেও তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। শরণার্থী বা অর্থনৈতিক অভিভাসীদের মধ্যে অনেকের জন্যই ইন্দোনেশিয়া অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের ট্রানজিট পয়েন্ট হওয়ায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে দেশটি।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরমানাথা নাসির অস্ট্রেলিয়ার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে তাদের অপরিবর্তনীয় অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, আমরা এই ধরনের কাজ সমর্থন করিনা, বিশেষ করে যখন তা পানিতে হয়। এতে বিপদজনক কিছু ঘটার শঙ্কা থাকে। এছাড়াও তা অবৈধ অভিবাসী সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান আনবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, মালয়েশিয়ার বাটারোর্থে মঙ্গলবার এক পুলিশি অভিযানে বন্দি করে রাখা ২৭ বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। মুক্ত হওয়া দূর্বল এবং অসুস্থ এই বাংলাদেশীদের দুটি আলাদা জায়গায় আটকে রাখা হতো এবং তাদের শুধু রুটি এবং পানি খেতে দেয়া হতো বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানায় পেনাং পুলিশ চিফ কোম দাতুক আব্দুল গাফার রাজাব।
পুলিশি অভিযানের বর্ণনায় তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল এগারোটার দিকে শিল্প এলাকা তামান দেসা মুর্নি থেকে ১৭ জনকে উদ্ধারের পর তাদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে জালান বাগান লালাং থেকে আরও ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়।
ফেব্রয়ারির ২ তারিখে তারা কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছে এবং মার্চের ৭ তারিখে তাদের পেনাংয়ে নিয়ে আসা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের কারোরই ওয়ার্ক পারমিট নেই। তাদের কাছে শুধু পাসপোর্ট রয়েছে।