নতুন ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে দুই-তিনটির অবস্থা খুবই নাজুক। নিজেদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে নাজুক অবস্থা পড়েছে ব্যাংকগুলো।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী এসব কথা বলেন।
‘অ্যান ইভালুয়েশন অব দ্য পারফরমেন্স অব নিউ কর্মাশিয়াল ব্যাংকস’ শীর্ষক সেমিনারে নতুন ব্যাংক নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. সোহেল মোস্তফাসহ চার সদস্যের একটি টিম।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ব্যাংকগুলো করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয়ে নির্দেশনা মানছে না। কর ছাড় পেতে নানাভাবে সিএসআরের পেছনে অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয় করছে ব্যাংকগুলো।
এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। তবে ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই দুর্বল বা ভালো তা এখনই বলা যাবে না। যে দুই-তিনটি ব্যাংকে বড় ধরনের বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সার্বিকভাবে তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে।’
কর্মশালায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকার এত ব্যাংকের অনুমোদন না দিলেও পারতো।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘ব্যাংকের শাখা বাড়ানো উচিত। ভারতে ১২ হাজার মানুষের জন্য একটি ব্যাংকের শাখা আছে। আমাদের ব্যাংকগুলোর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, ১০ হাজার মানুষের জন্য একটি ব্যাংকের শাখা।’
বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যাংককে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার আগে আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’ একইসঙ্গে খারাপ করলে লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, ‘ঋণ খেলাপি হওয়া এখন একটা কালচার হয়ে গেছে। অনেক সময় খেলাপির সঙ্গে জড়িত অনেকের নামে সংবাদ হলেও চার্জশিটের সময় তাদের নাম থাকে না। তাই ঋণ খেলাপিদের সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে হবে।’
নতুন ব্যাংকগুলোর পারফরমেন্স মূল্যায়নের জন্য চার বছর যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মেহমুদ হুসাইন বলেন, ‘নতুন ব্যাংকগুলোর জন্মই আজন্ম পাপ। আমাদের জন্মই হয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। তাই পুরনো বা অন্য প্রজন্মের ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলে হবে না।’
বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, নতুন ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতা করে ঋণ বিতরণ করছে।’ এভাবে বাছ-বিচারহীনভাবে ঋণ করলে তারা বেকায়দায় পড়তে পারে বলেও মনে করেন তিনি।