নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলেও বাণ্যিজিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিহা ও অসহযোগিতার কারণে ভেস্তে যাচ্ছে এই উদ্যোগ। ফলে এই লক্ষ্যে ৫ বছর আগে গঠিত ১শ’ কোটি টাকা তহবিলের মাত্র ২০ শতাংশ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থই অলস পড়ে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এই তহবিলের সিংহভাগ অর্থ অব্যবহৃত পড়ে থাকায় বিষয়টি নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট না থাকলেও ছোট উদ্যোক্তারা কম সুদে ঋণ না পাওয়ার কারণ জানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুসন্ধানে নামছে। এই বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হবে। একই সাথে ঋণ গ্রহণে আগ্রহ সৃষ্টি করতে প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের জামানতসহ উচ্চ সুদের নিজস্ব ঋণের বাইরে এ পুনঃঅর্থায়নের কম সুদের ঋণ বিতরণে আগ্রহী নয়। ফলে ঋণ বিতরণ হচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, খেলাপি হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে ব্যাংকগুলো অনভিজ্ঞ ও নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। এছাড়া ছোট ঋণ পরিচালনায় কষ্ট বেশি। তাই এক্ষেত্রে ব্যাংকের আগ্রহ কম। এখন এই তহবিল কাজে লাগাতে জাতীয় ভাবে উদ্যোগ নেয়া জরুরী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনীহা রয়েছে বলে মনে হয়। কারণ যারা এ তহবিল বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে, তাদের অনেকেই ঋন বিতরণ করেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে পারে না। অতএব শুধু তহবিল গঠন করলেই চলে না। এর সাথে বিতরণের উদ্যোগও নিতে হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এর দায় এড়াতে পারে না। তবে এই তহবিল দিয়ে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হলে উদ্যমী ও মেধাবী উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেজন্য জাতীয় উদ্যোগে নিতে হবে।
এই ঋণ বিতরণ করতে ৩৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ তহবিল থেকে ১৮ কোটি টাকা ও ৭টি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি টাকা নিয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করে। বাকি ৮০ কোটি টাকা ওই সময় থেকেই অব্যবহৃত থেকে যায়।
২০১৪ সালে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে এই নতুন উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল স্কিম তৈরি করা হয়েছে। যার উদ্দেশ্য হলো- যে সব উদ্যোক্তার ছোট ব্যবসা আছে কিন্তু তহবিলের অভাবে ব্যবসা বড় করতে পারছেন না, জামানতের অভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না কিংবা যারা এর আগে ব্যবসা করেননি। এমন উদ্যোক্তাদের বিনা জামানতে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হারে ঋণ দেয়া। আর ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ নিতে পারবে ৫ শতাংশ হার সুদে।
একজন গ্রাহক বিনা জামানতে ১০ লাখ টাকা আর জামানত দিয়ে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। তবে এই জন্য উদ্যোক্তাকে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে।
উদ্যোক্তা যে বিষয়ে ঋণ নিবেন সেই ব্যবসায় বা উদ্যোগে তার কারিগরী জ্ঞান থাকতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৪৫ বছর।
যে প্রকল্পের জন্য উদ্যোক্তা ঋণ নিবে তার ২০ শতাংশ অর্থ উদ্যোক্তাকে বহন করতে হবে। ১, ৩ ও ৫ বছর মেয়াদে এই ঋণ নেয়া যায়।