‘‘বছরটি ছিল ২০০৩। আমি তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। সেবছরই বাবা মারা যাওয়ার পর আমি খুব একা হয়ে যাই। একমাত্র ভরসা মা আর বড় বোন। মায়ের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ সংসার সামলানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা। তারপর পাহাড়সম বাধা পেরিয়ে সাফল্যের চাবি হাতে পেয়েছি।’’
এভাবেই নিজের সংগ্রামী জীবনের কথা বলছিলেন ৩৮তম বিসিএসে (কৃষি) কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পদে সুপারিশপ্রাপ্ত অমিত মালাকার।
জীবনের গল্প বলতে গিয়ে অমিত চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘২০০৬ সালে এসএসসিতে সাফল্যের সাথে জিপিএ ৫ অর্জন করি। এরপর শুরু হলো জীবনের নবজাগরণ। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ ৫ অর্জন করি।’
‘‘এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধ পেরিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে উত্তীর্ণ হই। ধাপে ধাপে স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর পাস করি।’’
পড়াশোনার পর কর্মজীবন। কিন্তু সরকারি চাকরি কি এতোই সহজ? প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে প্রবেশ করতে হয়। সেই সুকঠিন পথ পারি দিয়ে সফল হয়েছেন গাজীপুরের অমিত মালাকার।
বিসিএস সম্পর্কে জানতে চাইলে অমিত মালাকার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘বিসিএস হলো পরিশ্রম আর ভাগ্যের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। পরিশ্রম করলে ভাগ্য সহায়তা করবে।’
কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিসিএস প্রিলিমিনারি ২০০ নম্বরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় পরীক্ষার্থী। বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত এই তিনটি বিষয়ের ১০০ নম্বরে অনেকে ভালো করতে পারে না। তাই প্রিলিমিনারিতে খারাপ করে অধিকাংশই। বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক, কম্পিউটার ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়েও সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। প্রিলিমিনারিতে কেউ ২০০ পায় না। তাই সবাই সব পারবে এটা ভাবাও অমূলক।’
৩০ জুন বিসিএসের রেজাল্ট জানার পর অনুভূতির কথা জানতে চাইলে অমিত বলেন, ‘পড়াশোনার পর কর্মজীবনে দেশের মানুষের কল্যাণে সরাসরি কাজ করবো এটা ভেবেই খুব ভালো লাগছে।’
‘’আমি ছোট থেকে খুব কষ্ট করে মানুষ হয়েছি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মারা যায়। তখন আমি আর আমার বোন খুব কষ্ট করে মায়ের সামান্য বেতন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। পরে কলেজ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হই। কিন্তু চাকরির প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হচ্ছিলাম না।
এরপর ৩৮তম প্রিলিমিনারি পাস করে লিখিত পরীক্ষা দেই। মৌখিক পরীক্ষা আশানুরূপ না হলেও বিসিএস কৃষি ক্যাডারের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পদে ৫০তম হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।’’
নতুন ক্যাডার প্রত্যাশীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন পড়াশোনা করতে হবে। যত বেশি বার রিভাইস করবেন, ততো ভুল হবার সম্ভাবনা কম থাকবে। অন্যান্য বিষয়ের সাথে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিতে বেশি জোর দিয়ে পড়তে হবে। এটাই টেকনিক।’
ছেলের সাফল্যে তার মা তাপসী মালাকার বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার অশেষ করুণায় আমার ছেলে আজ বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমার মেয়েকে রসায়নে মাস্টার্স পাস করিয়েছি। আমি তাদের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।’
ভাইয়ের সাফল্যে বড় বোন সোমা মালাকার বলেন, ‘অমিত ছোট বেলা থেকেই অনেক পরিশ্রমী। আজ সে সফল হয়েছে। আমি ওর জন্য আশীর্বাদ করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি জনকণ্ঠ পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন অমিত। মা তাপসী মালাকার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন।