বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গত বছরের চেয়ে ভালো করেছে বলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলার মাধ্যমে দেশে আগের চেয়ে শান্তি বিরাজ করছে বলেও জানায় প্রতিবেদনটি।
‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১৮’ নামে দেশভিত্তিক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে যদিও পৃথক ঘটনায় ধর্মনিরপেক্ষ লেখক হত্যা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের ওপর হামলা হয়েছে তারপরও অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এগিয়েছে দেশটি। সেখানে বিগত বছরের চেয়ে সন্ত্রাসবাদ পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাসবাদ দমনে চলমান প্রচারণা, সন্দেহভাজন জঙ্গি নেতাদের আটক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধারের মাধ্যমে দেশে আগের চেয়ে শান্তি বিরাজ করছে।
তবে সন্ত্রাসীদের সফল বিচারের বিচারিক বাধা এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযানের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ বিস্তৃতভাবে সন্ত্রাসবিরোধী সাফল্যকে বাধা দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ এবং তার অঞ্চলটিকে সন্ত্রাসবাদী নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বন করে চলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৪০টি সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে আল-কায়দা ও আইএসআইএস। তবে বাংলাদেশ সরকার এই হামলার জন্য স্থানীয় জঙ্গিদের হামলার জন্য দায়ী করে আসছে।
সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি তাদের মতাদর্শগুলি ছড়িয়ে দিতে এবং বাংলাদেশ থেকে তাদের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশি জঙ্গিরা একাধিক প্রকাশনা, ভিডিও আইএসআইএসের সাথে প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালে সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের জুন মাসে মুন্সিগঞ্জে এক সন্ত্রাসী হামলায় একজন ধর্ম নিরপেক্ষবাদী লেখক ও রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হয়। যার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এই হত্যার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন আইকিউআইএস সংশ্লিষ্ট থাকার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিলেটে ইসলামের শত্রু ব্যাখ্যা দিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারী অন্য জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার তদন্ত প্রতিবেদনে বলছে, হামলাকারীর সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ত নেই।
এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সীমান্ত সুরক্ষায় বাংলাদেশ এখনো ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবাদ আইন বাস্তবায়ন করে চলেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদ আইনের আওতায় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় দুটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে।
বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সীমান্ত সুরক্ষা ও পোর্টের নিরাপত্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ৭৭.৪৬ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। যা বিগত বছরগুলোর নিরাপত্তার চেয়ে প্রায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ বৈশ্বিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে থাকে। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন( র্যাব) এবং কাউন্টার-টেররিজম ইউনিট প্রতিনিয়ত সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার এবং অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই: বাংলাদেশি সংস্থাগুলি ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়কে স্থানীয়, তৃণমূল পর্যায়ে সমর্থন করার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে গ্লোবাল তহবিল সহায়তা, জিসিইআরএফ এর অধীনে কান্ট্রি সাপোর্ট মেকানিজমের মাধ্যমে সমবায় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে ইমাম ও ধর্মীয় পণ্ডিতদের সাথে কাজ করছে।
এদিকে পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতার উগ্রপন্থা প্রতিরোধে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে কাজ করছে।