অভিবাসী গ্রহণের বার্ষিক পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শুধু তাই নয়, নতুন আসা অভিবাসীদের একটি অংশের জন্য প্রথম তিন বছর বড় বড় শহরগুলোতে থাকা নিষিদ্ধও ঘোষণা করেছে দেশটি।
শহরাঞ্চলে জনজট কমিয়ে আনতে বুধবার এ ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার।
অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় শহরগুলোতে দিন দিন বাড়ছে ঘরবাড়ির দাম। একই সঙ্গে বাড়ছে বসবাসকারীর সংখ্যা। অনেকেই এই সমস্যাগুলোকে বেশি বেশি অভিবাসী নেয়ার কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফল হিসেবে দেখছেন।
রাজধানী ক্যানবেরায় এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার মরিসন বলেন, ‘এটি এমন একটি বাস্তব সমস্যা যার সমাধান অস্ট্রেলীয়রা চাইছিলেন।’ এরপরই প্রতি বছর অস্ট্রেলিয়ায় নেয়া অভিবাসীর সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজারে আনার ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য ফেডারেল নির্বাচনে আগে প্রাথমিক জনমত ভোটে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের অবস্থা বেশ টালমাটাল। তাই অভিবাসী আগমনের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তটিকে ক্ষুব্ধ বিরক্ত ভোটারদের মাঝে মরিসনের নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, কমিয়ে আনা সংখ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩ হাজার জন অস্ট্রেলিয়ার নতুন স্কিলড ভিসার অধীনে অভিবাসী হতে পারবেন। এরা অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহরগুলোর বাইরের এলাকাগুলোতে তিন বছর থাকার পর দেশটির চিরস্থায়ী অধিবাসী বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ পাবেন।
অজি অভিবাসন মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান বলেছেন। পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়ার জন্য নতুন অভিবাসীদেরকে অবশ্যই মেলবোর্ন, পার্থ, সিডনি এবং গোল্ড কোস্ট বাদে অন্য কোথাও থাকতে হবে। কেননা এসব শহরের অবকাঠামো ইতোমধ্যে অত্যাধিক ব্যবহৃত হয়ে গেছে।
কেউ যেন এ নীতিতে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ না পায়, সেজন্য ভবিষ্যতে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির আবেদনের সময় অভিবাসীদের আগের তিন বছরের বাসস্থান এবং কর্মক্ষেত্রের ঠিকানার প্রমাণ দিতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছে।
অস্ট্রেলিয়ায় আঞ্চলিক পরিসরে দক্ষ লোকবলের অভাব থাকায় এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
গত সেপ্টেম্বরে রিচটেল পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা যায়, সিডনির ৬৩ শতাংশ অধিবাসী চান, অস্ট্রেলিয়ার এই সবচেয়ে বড় শহরটিতে আসা অভিবাসীর সংখ্যা কমানো হোক।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার দু’টি মসজিদে অস্ট্রেলিয়ার এক নাগরিকের বন্দুক হামলায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিশর এবং বিভিন্ন দেশের অভিবাসীসহ ৫০ জন নিহতের ঘটনার পর পরই এই অভিবাসন নীতির পরিবর্তনকে অভিবাসীদের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির জাতীয় পর্যায়ের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ২৮ বছর বয়সী ট্যারান্ট শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নূর এবং লিনউড মসজিদে জুমআর নামাজরত মুসল্লিদের ওপর অতর্কিতে বন্দুক হামলা চালান। আর আহত ৪৭ জনের মধ্যে দু’ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ বিষয়ে মরিসন বলেন, ‘আমার বড় একটা ক্ষোভ হলো, জনসংখ্যা এবং অভিবাসন প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেক সময়ই অতিরিক্ত প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের মানুষেরা বিষয়গুলোকে নিজেদের ভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করে। এ ধরনের সবকিছু আমি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি।’