৪৪ টি দেশের ছবি এবং ১১ টি আমদানীসহ এবছর মুক্তি পেয়েছে মোট ৫৫টি ছবি। এরমধ্যে গড়ে চার-থেকে পাঁচটি ব্যবসা সফল ছবি পেয়েছে ঢালিউড। অন্যান্য বছরের তুলনায় হিটের গ্রাফ নিন্মমুখী। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালটা বাংলা চলচ্চিত্রের জন্যই সার্বিকভাবে খুব ভালো যায়নি। তবে সবার ছবি হিট না হলেও একক ভাবে অভিনয়ের জন্য আলোচিত হয়েছেন বেশকিছু নায়িকা। যোগ-বিয়োগের অঙ্কে আলোচিত পাঁচ তালিকা করা হয়েছে।
এ বছর আমজনতার হাততালি কুড়িয়েছেন জয়া আহসান ও পূজা। ক্ষেত্র বিশেষে অভিনয়ের প্রশংসা পেয়েছেন পরীমনি, বুবলী ও মাহিয়া মাহি। শুধু সমালোচকধন্য অভিনয় কিংবা ব্যবসা সফল ছবি নয়, সারাবছর পর্দা ও পর্দার বাইরে তুমুল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছিলেন এই পাঁচ নায়িকা। তাদের নিয়েই এই প্রতিবেদনের পোস্টমর্টেম…
জয়া আহসান
ঢালিউডের জনপ্রিয় অন্য নায়িকারা ‘নাম্বার ওয়ান’ সিংহাসন নিয়ে ব্যস্ত, জয় আহসান তখন তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয় ক্যারিশমা দেখিয়ে এ বছর ছাড়িয়ে গেছেন অন্য সবাইকে। বছরের শুরুতে জয়া আহসান অভিনীত পুত্র ‘ছবি’ মুক্তি পেয়েছিল। অটিস্টিক শিশুদের বেড়ে ওঠা, পরিবারের চ্যালেঞ্জ আর পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবস্থায় একটি অটিস্টিক শিশু জীবন-যাপন কেমন হয়, সেসব দৃশ্যপট তুলে ধরা হয়েছে ‘পুত্র’ চলচ্চিত্রে। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। ব্যবসায়িক ছবিটি ফায়দা তুলতে না পারলেও জয়া আহসান তার অভিনয় দিয়ে প্রশংসা পান। শুধু তাই নয়, গেল ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের (ইস্ট) জিও ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন জয়া আহসান। এ বছর জয়া আহসান প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম সিনেমা ‘দেবী’ অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করে। ছবির মুক্তির আগে ব্যতিক্রমী প্রচারণা দিয়েও চমকে দেন এই অভিনেত্রী। মুক্তি একমাসের মধ্যে সরকারী অনুদান ও জয়ার নিজস্ব প্রযোজিত দেবী লাভের ঘরে ঢুকে পড়ে। সব মিলিয়ে জয়াই ছিলেন ‘টক অব ২০১৮’!
দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার সিনেমাতেও চলতি বছরে দাপট দেখিয়েছেন জয়া আহসান। তার অভিনীত ‘ক্রিসক্রস’ এবং সৃজিত মুখার্জীর ‘এক যে ছিলো রাজা’ বেশ সুনাম অর্জন করে।
পূজা চেরী
চলচ্চিত্রের সর্বকণিষ্ঠ নায়িকা পূজা চেরী। এখনও মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকাননি পূজা। অথচ এ বছর পূজার তিন ছবি মুক্তি পায়। ‘নূর জাহান’ নামে একটি যৌথ প্রযোজনার ছবি ছাড়াও লোকাল প্রোডাকশনের ‘পোড়ামন ২’ এবং ‘দহন’ ছবি দুটি ছবির নায়িকা হিসেবে সাড়া ফেললেন তিনি।
বছরের শুরুতে পূজার ‘নূর জাহান’ মুক্তি পায়। ওই ছবি দিয়ে পূজা আলোচনায় আসেন। শিশুশিল্পী থেকে নায়িকা পূজার রাজকীয় আবির্ভাব। ছবিটি ব্যবসায়িকাভাবে সুবিধা করতে না পারলেও পূজা তার অভিনয় দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন।
এরপর মুক্তি পায় ‘পোড়ামন ২’। ছবিটি টানা কয়েক সপ্তাহ হাউজফুল চলে। গায়ে লাগে সুপার হিটের তকমা। আর এরপর থেকেই নায়িকা হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে আসন নিয়ে বসেন কম বয়সী এই অভিনেত্রী। ‘পোড়ামন ২’-এর পাশাপাশি বছরের সবচেয়ে ব্যবসা সফল এই ছবির নায়িকা পূজার পালে যোগ হয় হিট নায়িকার খেতাব। বছরের শেষদিকে পূজা অভিনীত আরেক ছবি ‘দহন’ মুক্তি পায়। ওই ছবিতেও পূজা তার অভিনয় দিয়ে নজর কেড়েছেন। প্রযোজকের মতে, দহন ছবির ব্যবসা হয়েছে লাভ জনক। তাই চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, রুপালী পর্দায় পূজা এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন।
শবনম বুবলী
বছরের অন্যতম আলোচিত নায়িকা শবনম বুবলী। রোজার ঈদে বুবলী অভিনীত ‘সুপার হিরো’ এবং ‘চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ এই দুই ছবি মুক্তি পায়। পরপর ঈদুল আযহায় মুক্তি পায় ‘ক্যাপ্টেন খান’। তিন ছবিতে বুবলীর নায়ক ছিলেন ঢালিউড কিং শাকিব খান। সে কারণে বছরের অর্ধেক সময়ই বুবলী ছিলেন আলোচনায়।
‘সুপার হিরো’ ছাড়া অন্য দুই ছবি প্রযোজনা করেছে শাপলা মিডিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া’ ছবিতে লগ্নিকৃত টাকা উঠে গেছে। তবে ‘ক্যাপ্টেন খান’ ব্যবসায়িক ভাবে সাফল্য পায়নি। তিনি দাবী করেন, নকল এবং পাইরেসির কবলে না পড়লে ‘ক্যাপ্টেন খান’ থেকে টাকা উঠে আসতো। বুবলী অভিনীত আরেক ছবি ‘সুপার হিরো’ নির্মাণের শুরুতে থেকে আলোচনায় এসেছিল। মুক্তির সময় ব্যাপক বাঁধার মুখে পড়েছিল। ছবিতে বুবলীর অভিনয় প্রশংসা পায়। কিন্তু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হার্টবিট কথাচিত্র চ্যানেল আই অনলাইনকে জানায়, এখনও ‘সুপার হিরো’ ছবি লাভজনক বলা যাবে না।
সিনেমা ছাড়াও শাকিব খানের সঙ্গে বুবলীর প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায় বছরের শুরুর দিকে। সবমিলিয়ে চলতি বছর শাকিব খানের নাম এলেই উঠে আসতো বুবলীর নাম।
মাহিয়া মাহি
বছরের সর্বাধিক মুক্তিপ্রাপ্ত (পাঁচটি) ছবির নায়িকা মাহিয়া মাহি, তবে কোনো ছবির জন্যই খুব বিশেষ ভাবে আলোচিত হননি মাহি। তবে মাহি অভিনীত চলতি বছরে সবচেয়ে বেশী প্রশংসিত ছবির নাম ‘জান্নাত’। উড়ো খবরে এর ব্যবসায়িক সাফল্য শোনা গেলেও জান্নাতের নায়ক সাইমন কিছুদিন আগে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছিলেন, জান্নাত ব্যবসায়িকভাবে সুবিধা করতে পারেনি। তবে যারা দেখেছেন, তারা প্রশংসা করেছেন, ভালো বলেছেন। মাহি অভিনীত আরেক ছবি ‘পলকে পলকে তোমাকে’ চাই আশানুরূপ ব্যবসা করেছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। প্রায় ৮০ লাখ টাকা বাজেটের এই ছবি মুক্তির সময় টেবিল কালেকশন করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এরপর অনলাইন ডিজিটাল রাইট, টেলিভিশন, হল থেকে প্রাপ্ত টাকা সবকিছু মিলিয়ে বছরের শেষে সুবিধাজনক স্থানে আসে। মাহির আরেক ছবি মনে রেখো (২২ই আগষ্ট) বাজেট ছিল ৩ কোটি টাকার উপরে। এ ছবিতে লগ্নিকৃত টাকা ফেরত আসেনি। তবে কলকাতার নায়ক বনির সঙ্গে মাহির এ ছবিটি দর্শক প্রশংসিত হয়েছিল। ‘পবিত্র ভালোবাসা’ (৫ অক্টোবর) ব্যবসায়িক ফ্লপ। ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আমি শুধু তোর হবো’। কলকাতার দুই নায়কের সঙ্গে মাহির এ ছবিটি নির্মাণের সময় ছিল আলোচিত। কিন্তু বছর শেষে ফ্লপের খাতায় নাম লেখায় এ ছবিটিও।
পরীমনি
পরীমনিই একমাত্র নায়িকা যিনি এ বছর নিজেকে আমূল বদলে ফেলেছেন। মানহীন ছবি একেবারেই করেননি। এমন সব ছবির জন্য অপেক্ষা করেছেন যেগুলো তার ক্যারিয়ারের অর্জন হতে পারে। ঠিক যেমনটা ‘স্বপ্নজাল’। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ছবির নায়িকা হয়ে বছরে আলোচনায় ছিলেন পরীমনি। বিশেষ করে এ ছবিতে শুভ্রার চরিত্রে তার অভিনয় সব শ্রেণির দর্শককে ছুঁয়ে গেছে। ছবি মুক্তির পর থেকে প্রশংসা পেয়েছেন ঢের। আগের চেয়ে ছবি নির্বাচনে পরীমনি হয়েছে সচেতন। ছবির বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম ও বিয়ের গুঞ্জনে আলোচনায় এসেছেন এই নায়িকা।
এই পাঁচজনের বাইরে অপু বিশ্বাস অভিনীত একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। সেটি হল ‘পাঙ্কু জামাই’। মানহীন এ ছবিটি দিয়ে অপুকে দর্শক একেবারেই গ্রহণ করেনি। তবে তার আবার অভিনয়ে ফেরা, শাকিব খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ইতি, সন্তান জয় অভিনয়ের বাইরে বিভিন্ন স্টেজ শোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা নিয়ে অপুকে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়েছে পুরো বছর জুড়েই।
অপু বিশ্বাসের পরেই আসে আরেক নাম, বিদ্যা সিনহা মিম। বছরের শুরুর দিকে শাকিব খানের সঙ্গে ‘আমি নেতা হবো’ ছবির মাধ্যমে প্রায় আট বছর পর জুটি বেঁধেছিলেন মিম। এ ছবিটি মানহীন হলেও শাকিবের নামের জোরেই পার পেয়ে যান। ছবিটি যদিও লাভের মুখ দেখেনি। এরপর মিম অভিনীত ‘পাষাণ’ মুক্তি পেয়েছিল। শুধু তাই নয়, কলকাতার ছবি হিসেবে আমদানিতে মুক্তি পেয়েছিল জিতের সঙ্গে মিমের ‘সুলতান’।
ঢাকাই ছবির আরেক নায়িকা ববিকে নিয়ে বছরের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা মাতামাতি হয়েছিল। কারণ তার ‘বিজলি’! যদি বিগ বাজেটের ছবি ‘বিজলি’ নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন ববি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। অন্যদিকে ববির ‘বেপরোয়া’ মুক্তির কথা শোনা গেলেও এখনও আলোর মুখে দেখেনি।
তুমুল আলোচিত নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার দেশের কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। জিতের সঙ্গে ‘ইনস্পেক্টর নোটি কে’ আমদানিতে এদেশের সিনেমা হলে চলেছিল। কিন্তু নকলের অভিযোগে ছবিটি দেখেনি দর্শক। তবে নিজের কণ্ঠে প্রথমবার গান গাওয়া ও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বাঁধা নিয়ে শোরগোল বাঁধে বছর জুড়ে। বছরের শেষে শাকিব খানের সঙ্গে বিজ্ঞাপনে কাজ করেও আলোচিত হন নুসরাত ফারিয়া।
এছাড়া জাকিয়া বারী মম অভিনীত ‘আলতা বানু’, ‘দহন’ ও ‘স্বপ্নের ঘর’ এই তিন ছবি মুক্তি পেয়েছে এবছর। আরেক নবীন নায়িকা অধরা খান অভিনীত ‘নায়ক’ ও ‘মাতাল’ দুই ছবি মুক্তি পেয়েছে। এগুলোও বছর একটা বিশেষ সময় জুড়ে আলোচনায় ছিল। তবে ব্যবসায়ীক ভাবে কোনো ছবিই খুব একটা সফল হয়নি।