নানা কারণেই বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৮ সালটি ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে ঢাকাই চলচ্চিত্র ছিলো নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আচ্ছন্ন। এবছরটি ছিলো ধকল কাটিয়ে ওঠার। শেষ পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে সুবাতাসের লক্ষণ।
নায়ক নির্ভর ঢাকাই সিনেমায় বরাবরের মতো এ বছরও কাণ্ডারি তারকা অভিনেতা শাকিব খানই। চলতি বছরেও তার অবস্থান ছিলো অনড়। তবে চলতি বছরে ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তির নাম তরুণ অভিনেতা সিয়াম আহমেদ। এছাড়াও চলতি বছরে দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী, বাপ্পী চৌধুরী, সাইমন ও আরিফিন শুভ।
সারাবছর পর্দা এবং পর্দার বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা, ঝুলিতে হিটের সংখ্যা, ছবিতে নায়কের ভূমিকা, দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টেনে আনার ক্ষমতা, সমালোচকদের সমর্থন সব মিলিয়ে এ বছরে ঢালিউডের ব্যস্ত নায়কদের নিয়েই বছর শেষের আয়োজন:
তবু কাণ্ডারি শাকিব…
২০১৮ সালেও ঢাকাই সিনেমার রাজত্বের অঘোষিত মুকুটটি ধরে রেখেছেন শাকিব খান। এ বছর মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ৮ টি ছবি। এরমধ্যে ৫ টি ছবি দেশের এবং ৩ টি কলকাতার, যা পরে আমদানি করে মুক্তি দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দাবী, আমি নেতা হবো, চিটাগাইঙ্গা পোয়া ও নোয়াখাইল্লা মাইয়া ছবিগুলো ব্যবসায়িক সাফল্য পায়। বিশেষ করে কলকাতার তিন ছবির মধ্যে ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এলো রে’ ২ ছবি এদেশ থেকে সুপারহিট ব্যবসা করে। তাই এ বছরও ৪টি ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়ে নিজের অবস্থান জিইয়ে রাখেন ঢাকাই ছবির এই সুপারস্টার।
এর বাইরে বাকি ছবিগুলো দিয়ে শাকিব খান তুষ্ট করতে পারেনি সমালোচকদের। যখন কলকাতার ছবিতে কাজ করেছেন শাকিব খান প্রতিবারই নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। তাছাড়া সারাবছর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কম মাতামাতি হয়নি ঢাকাই ছবির এই ‘সুপার হিরো’র। বছরের শেষে এসে শাকিব খান অনেক বছর পর বিজ্ঞাপনে কাজ করে নতুনভাবে আলোচিত হন। মুর্দাকথা, গত একযুগের মত চলতি বছরেও রাজত্ব করেছেন শাকিব খান।
ধূমকেতুর মতো আভির্ভূত সিয়াম…
এ বছর ঢালিউডে হ্যালির ধূমকেতুর মতো আভির্ভূত হত তরুণ অভিনেতা সিয়াম আহমেদ। ‘পোড়ামন ২’ ছবি দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে রীতিমত বিপ্লব ঘটান তিনি। ছবিটি ব্যবসাসফল ছবির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া।
প্রথম ছবির পর কয়েক মাসের ব্যবদানে চলতি বছরেই মুক্তি পায় সিয়ামের দ্বিতীয় ছবি ‘দহন’। যথারীতি এই ছবিটিও দর্শকের নজর কাড়ে। রাজনৈতিক গল্পের ছবি দহন-এ কাজ করে সিয়াম সব শ্রেণির দর্শকদের প্রশংসা লাভ করেন। সমালোকদের মতে, ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সিয়াম হতে পারবেন আগামী ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ চলচ্চিত্র তারকা।
দেবীর আশির্বাদে চঞ্চলের দাপট…
২০১৮ সালের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘দেবী’। শুধু আলোচিত আর প্রশংসিতই নয়, সেই সঙ্গে বক্স অফিসেও করেছে দারুণ ব্যবসা। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে এ ছবিতে ‘মিসির আলী’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ভার্সেটাইল অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। যখনই ছবিটি নির্মাণের ঘোষণা আসে তখন থেকে একেবারে আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ‘দেবী’। সবার আগ্রহ ছিলো মিসির আলী চরিত্রে চঞ্চল কেমন করেন। যথারীতি প্রত্যাশার জায়গা ছাড়িয়ে গেছেন চঞ্চল। বিশেষ করে ‘মনপুরা’, ‘আয়নাবাজি’র সাফল্যের পর ‘দেবী’-তে ‘মিসির আলী’ হয়ে নিজেকে প্রমাণ করা চঞ্চলের জন্য ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। তিনি এখানেও দেখিয়েছেন তার ক্যারিশমা। ছবি মুক্তির আগে নানা রকম ব্যতিক্রমী প্রচারণা এগিয়ে নিয়ে যায় চঞ্চল চৌধুরীকে। ফলত এ বছরের আলোচিত চিত্রতারকার তালিকায় তার স্থানে রয়েছে উপরে।
নায়কে টার্নিং বাপ্পীর
বরাবরের মতো গড়পরতা আলোচনায় ছিলেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। পলকে পলকে তোমাকে চাই, নায়ক, আসমানী ছবিগুলো মুক্তি পেলেও এবছর তার টার্নিং পয়েন্ট ‘নায়ক’ সিনেমা দিয়ে। যদিও ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ ছবির টাকা ওঠেছে বলে জানিয়েছে তার প্রযোজক। প্রযোজকের দাবী, ছবিটি প্রশংসা না পেলেও হল বুকিং দিয়েই মোটা অংকের বিনিয়োগের টাকা উঠে আসে।
এদিকে ‘নায়ক’ টার্নিং পয়েন্ট হলেও শেষ পর্যন্ত লাভের খাতায় নাম উঠেনি ছবিটির। আরেক ছবি ‘আসামানি’ মুক্তি পায় বছরের শেষ দিকে। কম হল পাওয়ায় এ ছবি সেভাবে দর্শক দেখেনি। তারপরেও নানা কারণে ঢাকাই চিত্রনায়ক বাপ্পী ছিলেন আলোচনায়।
বছরটি শুভ যায়নি আরিফিন শুভ ও সাইমন সাদিকের…
রুপালী পর্দার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় নায়ক আরিফিন শুভ। শাকিব পরবর্তী নায়কদের মধ্যে শুভকে এগিয়ে রাখেন দর্শক। সে সম্ভাবনা এখনো জিইয়ে রেখেছেন তিনি। বেছে বেছে সিনেমায় অভিনয় করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। তবে এবছর সেভাবে ভালো যায়নি আরিফিন শুভ’র। ‘ভালো থেকো’ এবং ‘একটি সিনেমার গল্প’ এই দুই ছবি মুক্তি পেলেও দর্শক মনে কিংবা বক্স অফিসেও জায়গা করতে পারেনি। দুই ছবিই ব্যবসায়িক বিপর্যয়ে পড়ে। তারপরেও শুভ ছিলেন আলোচনায়।
আরেক নায়ক সাইমন সাদিক অভিনীত এবছর মুক্তি পেয়েছে দুটি ছবি। একটি ‘জান্নাত’ ও অন্যটি ‘মাতাল’।এরমধ্যে ‘জান্নাত’ দিয়ে সাইমন ভীষণ প্রশংসা অর্জন করেছেন। ছবিটি চলতি বছরে আলোচনাও তৈরি করেছিলো। বিশেষ করে সাতক্ষীরাতে মুসুল্লিদের বাঁধার মুখে পড়ে এ ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়। তখন ছবির পক্ষে বিপক্ষে প্রচুর আলোচনা শোনা যায়। অন্যদিকে আরেক ছবি ‘মাতাল’ও খুব একটা সাফল্য পায়নি।
এই ছয় নায়কের বাইরে চিত্রনায়ক ফেরদৌস অভিনীত তিনটি ছবি মুক্তি পায়। পুত্র, মেঘকন্যা, পোস্ট মাস্টার-৭১ নামের ছবিগুলো রাজধানীর বাইরের প্রেক্ষাগৃহে চলেনি। শুধু ‘পুত্র’ ছবিটি সরকারি ভাবে বিভিন্ন হলে দেখানো হয়েছে। এছাড়া বাকি দুই ছবি মুক্তি পায় রাজধানীর দুই সিনেপ্লেক্সে।
এছাড়া চলতি বছরে অন্যতম আলোচিত একটি নাম হতে পারতো ইয়াশ রোহান। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’-এর মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে পা রাখা এই অভিনেতা প্রশংসিত হন দর্শক মহলে। কিন্তু ব্যবসায়িক ভাবে ছবিটি মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে।
এদিকে বছরের শেষে মুক্তি পাওয়া আরেক ছবি ‘মিস্টার বাংলাদেশ’-এ খিজির হায়াত খান জঙ্গি বিরোধী ছবিতে কাজ করায় আলোচনায় আসেন। গত বছর রাজনীতি ছবির মাধ্যমে তুমুল আলোচিত অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলনকে পাওয়া গেছে ‘আলতা বানু’ ও স্বপ্নের ঘর দুই ছবিতে।