চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অবৈতনিক শিক্ষা বনাম শিক্ষকদের নোট-গাইড কমিশন ও কোচিং বাণিজ্য

নতুন বছরে দেশজুড়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ চলছে। মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে নতুন বইয়ের গন্ধে ছাত্র ছাত্রী, অভিভাবকদের উচ্ছ্বাসের কথা। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ চরমভাবে উল্লসিত ও গর্বিত যথাসময়ে বই বিতরণ করতে পেরে। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে?

নতুন বই পৌঁছে দেয়ার খবর মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে, এ নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য শুনছে মানুষ।দেশ জুড়ে যে নোট গাইড বিক্রির রমরমা বাণিজ্য সংঘটিত হচ্ছে সে ব্যাপারে সরকার, মিডিয়া উভয়ই নীরব।

রিক্সা, ভ্যানগাড়ী, ট্রলি বোঝাই করে নোট গাইড কোম্পানীর লোকেরা  তাদের নিজ নিজ গাইড বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিচ্ছে। শিক্ষকরা মেতে উঠেছে কমিশন খাওয়ার প্রতিযোগিতায়। এক কোম্পানী ২০ পার্সেন্ট কমিশন দিলে শিক্ষক সেই কোম্পানীর গাইড বিক্রি করতে বাধ্য করছে ছাত্র-ছাত্রীদের।

আরেক নোট-গাইড কোম্পানী ২২ পার্সেন্ট কমিশন দিলে শিক্ষক তার গাইড কিনতে বলছে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় নোট গাইড কোম্পানীর লোকদের সাথে শিক্ষকদের নানা দেনদরবার, আলোচনা, সমালোচনাও হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে এব্যাপারে কোথাও কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকারের বিনামূল্যে দেয়া বইয়ের বহুগুণ বেশী দামে অভিভাবকদের নোট-গাইড কেনার জন্য টাকা গুনতে হচ্ছে। সুতরাং বিনামূল্যে বই পেয়ে লাভটা কী হল তাদের?

সরকার কেন বিনামূল্যে বই বিতরণ ও উচ্চমূল্যে নোট-গাইড বিক্রি দুটোকেই একই সময়ে সমানভাবে চলতে দিচ্ছে। শিক্ষকরা এমপিও সুবিধাভোগী, তারা কি করে বিদ্যালয়গুলিকে কমিশন সামগ্রীর শোরুমের মত বানিয়ে তুলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এগুলো দেখার কি কোন দায়িত্ব নেই? প্রতি জেলা উপজেলায় শিক্ষা অফিস রয়েছে এ ব্যাপারে তাদের কি কোন কাজ নেই। নোট-গাইড বিক্রির মহোৎসবের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে কোচিং বাণিজ্য। মাথাপিছু ১৫০০/২০০০ টাকা কোচিং ফি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের  কোচিং করাতে বাধ্য করানো হচ্ছে।

অভিভাবকদের প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ নেই। ভাবখানা এমন যেন তোমার সন্তানকে পড়াতে চাইলে ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও কোচিং ফি দিতে হবে। সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণ ও অবৈতনিক শিক্ষা কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ভূমিকায় নেমেছেন সরকারের বেতনভূক্ত শিক্ষক গণ।

সরকারের বিধিমালা কি বলে? এগুলো কি চলতেই থাকবে? বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এখন হয়ে উঠছে বাধ্যতামূলক নোট-গাইড কেনা ও কোচিং শিক্ষায়। দেশ জুড়ে অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বলাবলি হচ্ছে এই অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে কথাবলা কেবলই বুলি সর্বস্ব ও হাস্যকর হয়ে উঠবে।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)