চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অন্য পেশার তুলনায় সাংবাদিকদের মস্তিষ্ক কম সক্রিয়

দৈনন্দিন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অন্যান্য পেশার মানুষের তুলনায় একজন সাংবাদিকের মস্তিষ্ক কম সক্রিয়তা দেখায়। যার অর্থ হলো, অন্যদের তুলনায় আবেগ নিয়ন্ত্রণ, পক্ষপাতিত্ব দমন, জটিল সমস্যা সমাধান, এক কাজ থেকে অন্য কাজে ঢোকা, এমনকি সৃজনশীল ও উদারপন্থি চিন্তা করার ক্ষমতাও তাদের কম!

সাংবাদিকদের সঙ্গে শত্রুতা করে কিন্তু কথাগুলো বলা হচ্ছে না। নতুন একটি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্যগুলো। চলতি মাসে প্রকাশিত গবেষণাটি করেছেন স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং লিডারশিপ কোচ ড. তারা সোয়ার্ত।

গবেষণার জন্য ড. তারা বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সম্প্রচার মাধ্যম এবং অনলাইন মাধ্যম থেকে মোট ৪০ জন সাংবাদিককে বেছে নেন। টানা সাত মাস তাদের ওপর লাইফস্টাইল, স্বাস্থ্য এবং আচরণগত নানা বিষয়ের ওপর পরীক্ষা নেন তিনি।

পরীক্ষাধীন প্রত্যেক সাংবাদিকের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া তাদেরকে টানা তিন দিন ধরে একটি হার্টরেট মনিটর গায়ে লাগিয়ে রাখতে হয়েছে। একই সঙ্গে গবেষণা চলাকালীন পুরোটা সময় তাদের খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণের হিসেব লিখে রাখতে হয়েছে। এবং সবশেষে একটি ব্রেইন প্রোফাইল কোয়েশ্চেনেয়ারের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়।

লন্ডন প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় পরিচালিত গবেষণাটির উদ্দেশ্যই ছিল সাংবাদিকরা মানসিক চাপের মধ্যে কীভাবে নিজেকে সামলান এবং কাজ করেন তা নিরূপণ করা।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেল, সাংবাদিকদের মস্তিস্কের সক্রিয়তা আমজনতার তুলনায় কিছুটা নিম্ন পর্যায়ের। এটা হওয়ার পেছনের একটি বড় কারণ হলো সাংবাদিকরা নিজ থেকেই অন্যদের তুলনায় বেশি অ্যালকোহল, ক্যাফেইন এবং বেশিমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণের প্রবণতা।

৪০ সাংবাদিকের ৪১ শতাংশই জানান, তারা সপ্তাহে গড়ে ১৮ বা তার বেশি ইউনিট করে অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় পানীয় পান করেন, যা একজন মানুষের সাপ্তাহিক সর্বোচ্চ যে পরিমাণ অ্যালকোহল গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর, তা থেকে ৪ ইউনিট বেশি। কিন্তু এরা অ্যালকোহল বেশি পান করলেও দৈনিক যে পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন, ৫ শতাংশেরও কম সে পরিমাণ পানি পান করেছেন।

তবে ব্রেইন প্রোফাইল (মস্তিষ্কের চিন্তাধারা বা সক্রিয়তার বিন্যাস) বিষয়ক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গবেষণায় অংশ নেয়া সাংবাদিকরা মনে করেন, তাদের পেশা খুব বেশি অর্থপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যমণ্ডিত একটি পেশা।

বিজনেস ইনসাইডার জানায়, পেশাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকরা অনেক বেশি মানসিক স্থিতিশীলতা ও প্রাণবন্ততা দেখিয়েছেন। তারা সোয়ার্ত মনে করেন, সাংবাদিকদের এই বৈশিষ্ট্যটি তাদেরকে অন্যান্য পেশার মানুষদের চেয়ে কঠোর ডেডলাইন মাথায় নিয়েও তুলনামূলক বেশি ভালোভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাংবাদিকরা যে কোনো ধারণার চেয়ে ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দেন। এর মধ্য দিয়ে তারা বৃত্তের বাইরে গিয়ে এমনভাবে চিন্তা করতে পারেন বা এমনভাবে একটি বিষয়ের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের সংযোগ খুঁজে বের করতে পারেন যা অন্য পেশার মানুষরা সাধারণত পারেন না।

এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের মধ্যে কোনটার গুরুত্ব বেশি আর কোনটার গুরুত্ব কম তা বেশ চাপের মধ্যেও অন্যদের চেয়ে বেশ ভালোভাবে নিরুপণ করতে পারেন সাংবাদিকরা।

অন্যদিকে খাওয়া, পুষ্টির যোগান, স্বাস্থ্যগত যত্ন, মানসিক প্রশান্তি কম থাকে সাংবাদিকদের। তাদের মাথায় সারাক্ষণ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎসহ হাজারটা বিষয়ে চিন্তাভাবনা আর আবেগ ঘোরাফেরা করতে থাকে। এর ফলে তারা অনেক সময়ই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না এবং একটা বিষয়ে ফোকাস করতে পারেন না।

গবেষণাটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে