গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার আড়াল গ্রামের একটি ঘটনা পুরো দেশকে নাড়া দিয়ে গেল। ফেসবুকে করা এক পোস্টে পক্ষে-বিপক্ষে করা কমেন্টের জেরে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও চারজন। যারা নিহত হয়েছেন তারা সবাই কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণগাঁও চরপাড়া গ্রামের।
চ্যানেল আই অনলাইন-সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর এক পারে দক্ষিণগাঁও চরপাড়া গ্রাম। অন্যপাশে নরসিংদীর জেলার এক গ্রামের কোনো এক ব্যক্তি ফেসবুকে ‘বিতর্কিত’ পোস্ট দেন। সেই পোস্টের কমেন্টে দুই গ্রামের মানুষ বিরোধিতায় নামে।তার জেরে দুইপক্ষ বাগ্বিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষে জড়ান। সেই সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয় বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই যুবকের মৃত্যু হয়। যাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
দুঃখজনক এই ঘটনার পর তা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে ফেসবুকে এমন সামান্য পোস্ট থেকে এত নির্মম এক ঘটনা মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। কোনোভাবেই এমন অসহিষ্ণুতাকে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই। তাদের প্রশ্ন- একটা ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে কি এমন মহা অন্যায় হয়েছে, যার জন্য এত বড় হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্ম হবে? কোনো পোস্ট নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে, এমনকি হাতাহাতি বা মারামারিও হতে পারে। কিন্তু খুনের মতো ঘটনা সবার কাছেই অপ্রত্যাশিত।
তাহলে কি মানুষ দিনে দিনে আরও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে? পর মত সহ্য করার সবটুকু ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে? এটা তো স্বাভাবিক বিষয়; একজনের ফেসবুকের পোস্টের কোনো বক্তব্য, অন্যজনের পছন্দ নাও হতে পারে। দরকার হলে পাল্টা পোস্টে সেই ব্যক্তির পোস্টের সমালোচনাও করা যেতে পারে। কমেন্ট-পাল্টা কমেন্টে সেই আলোচনা আরও ঋদ্ধ হয়, সম্মৃদ্ধ হয়।কিন্তু তাই বলে এত বড় সহিংসতার জন্ম দিতে হবে?
একটা সহিংস না হলেও ইদানিং এমন ঘটনা বেড়েছে। কারো সাধারণ আলোচনা বা বক্তব্য রাজনৈতিক সুবিধার হাতিয়ার করা হয়েছে।কখনও আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে আরেক ধর্মের অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনাও অনেক ঘটে। এমন কি পাড়া বানাম পাড়ায়, গ্রাম বনাম গ্রামেও তুচ্ছ কারণে সহিংসতার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এসবের পেছনে মূল কারণ সহিষ্ণুতার অভাব। অন্যের মতামতকে সম্মান না করায় দিনে দিনে বাড়ছে তা।
আমরা মনে করি, অন্যের মতকে শ্রদ্ধা জানাতে না পারলে এমন দুঃখজনক ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে।পর মতে অসহিষ্ণুতা কোনো সমাধান আনবে না।আমাদেরকে সহিষ্ণু হতে হবে। তবেই সমাজে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় থাকবে।