প্রশ্নপত্র ফাঁসের শঙ্কা থাকায় আগাম প্রতিরোধমূলক নানা উদ্যোগের মধ্যে সোমবার সারাদেশে শুরু হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এতে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এ পরীক্ষা নিয়ে অভিভাবক আর শিক্ষার্থীদের শঙ্কার কারণ, কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় ধারাবাহিক ও নজিরবিহীন প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। সেসময় প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। পরে দেখা গেছে সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে কেন্দ্রে সরবরবাহ করা প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল। ওই পরীক্ষা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই প্রথম লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট ঠিক করা হবে। বলা হচ্ছে, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্র কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরে এসএমএস করে নির্ধারিত সেট কোড পাঠানো হবে। তারপর সেই সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিতে হবে। এর বাইরে পরীক্ষার কয়েকদিন আগে থেকে কোচিং সেন্টার বন্ধ, পরীক্ষাকেন্দ্রের ২’শ মিটারের মধ্যে মুঠোফোন এবং কোনো ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিষিদ্ধসহ আরো কিছু নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপের কথাও আমরা জেনেছি। সরকারের এসব উদ্যোগ প্রশ্ন ফাঁসরোধে কতোটা ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে অামরা এখনই মন্তব্য করতে চাই না, কেননা পরীক্ষা শুরু হলেই এর কার্যকারিতা স্পষ্ট হবে। তবে সবকিছুর পর আমরা কেউই চাই না, এসএসসি পরীক্ষার সেই চিত্রের পুনরাবৃত্তি ঘটুক। ওই পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের পর আদালতের নির্দেশে গঠিত কমিটি দাবি করে, ভল্ট কিংবা ট্রেজারি থেকে যখন প্রশ্নপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে যায় তখনই তা ফাঁস হয়। তা যেভাবেই হোক না কেন, আমরা মনে করি- তা ছিল জাতিকে ধ্বংসের এক মরণ খেলা। যার মূল উদ্দেশ্য আস্তে আস্তে জাতিকে মেধাশূন্য করে ফেলা। আমরা বলতে চাই, সেইসব প্রশ্ন ফাঁসকারীদের কোনো ছাড় নেই। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী তার মেধার প্রতি, নিজের প্রতি আস্থা রেখে বিভিন্ন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেন। যার প্রভাব পড়ে তার পরবর্তী জীবনেও। কিন্তু একজন অসৎ শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক চান বাঁকা পথে কথিত ভালো ফলাফল করতে। মেধায় পিছিয়ে থাকা এই শিক্ষার্থী সবকিছুতেই পিছিয়ে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তার কাছে নিজের স্বার্থটাই বড় হয়ে উঠে। সেই স্বার্থ উদ্ধারে সব রকম অসৎ আর অন্ধকার পথ বেছে নেন তিনি, তার কাছে দেশ ও জাতি হয়ে উঠে গৌণ বিষয়। আমরা চাই না, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সেই অন্ধকার পথে হাঁটুক।