‘নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে’ প্রায় এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার লেখা বই সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অন্তর জ্বালা থেকেই তিনি মনগড়া বই লিখেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আগের দিন প্রকাশিত হয় সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’।
ওই বই নিয়ে এরই মধ্যে নতুনভাবে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। সেখানে তিনি দাবি করেন, হুমকির মুখে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। এরপর বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠাতে বাধ্য হন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি সাবেক হয়ে গেছেন। সাবেক হওয়ার অন্তর জ্বালা আছে। কি পরিস্থিতিতে সাবেক হয়েছেন তা সবাই জানে। বই লিখে মনগড়া কথা বলবেন বিদেশে বসে, সেটা নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন আছে? ক্ষমতা যখন থাকে না তখন অনেক অন্তর জ্বালা হয়।
‘প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় এখন বইতে যা লিখেছেন, তখন বলার সৎ সাহস একজন বিচারপতির কেন ছিলো না? এখন বিদায় নিয়ে কেন পুরানো কথা নতুন করে বলছেন, যা খুশি তাই বলছেন। এটা হয়, এটা হতেই পারে। এ নিয়ে আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি যদি সত্যই বলতেন, তাহলে যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন বললেন না কেন? সত্য কথা দেশের জনগণের মাঝে এসে বললেন না কেন? এখন বিদেশে বসে আপন মনে ভুতুড়ে কথা চাপছেন। এটা আমাদের ও দেশের মানুষের বিশ্বাস করতে হবে? এর যৌক্তিকতা নাই।
‘দলে দলে জনে জনে যে ঐক্যের কথা আসছে। এতে করে কি জনমনে কোন প্রভাব ফেলবে? শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কি জনপ্রিয়তা কমে যাবে? আমার বিশ্বাস তাদের এ দলের সংখ্যা বাড়িয়ে, এদেশে এক সময় ৭৬ পার্টির ঐক্যে হয়েছিলো। এটা কি জনমনে কোন প্রভাব ফেলতে পেরেছে? আমাদের আস্থা আছে, বাংলাদেশের জনমত শেখ হাসিনার পক্ষে রয়েছে।’
তিনি বলেন, নেতায় নেতায় ঐক্য হলে জনতার মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না। দেশের বর্তমান চিত্র অনুযায়ী এই মুহূর্তে জনমনে কোন প্রতিফলন হবে না। নেতায় নেতায় ঐক্য, দলে দলে ঐক্য যতই হোক জনগণ প্রভাবিত হবে না। এটাই আমাদের অভিজ্ঞতা।
এ সময় আরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায় এবং সেই রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র ক্ষমতাসীন দলের তীব্র সমালোচনার মুখে ছিলেন সেই সময়ের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। গত বছরের ১৩ অক্টোবর ছুটিতে থাকা অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
সেদিন গণমাধ্যমকে দেয়া বিবৃতিতে বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ নন, সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। চাপে নয়, ছুটি কাটাতে স্বেচ্ছায় বিদেশে যাচ্ছেন। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আমি আবারো ফিরে অাসবো।’
তবে তিনি আর ফিরে আসেননি। ছুটিতে থাকার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা পদত্যাগ করেছেন। বিদেশ থেকে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রায়ের কারণে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকার তাকে জোরপূর্বক ছুটিতে যেতে এবং পদত্যাগে বাধ্য করেছে।
যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে তা বরাবরই নাকচ করে দেয়া হয়।