দেশের পোষাক কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে যে কোনো ভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তাৎক্ষণিক তা নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন এক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন পটুয়াখালীর যুবক বেলাল হোসেন মিন্টু।
প্রযুক্তি বাস্তবায়নে তাকে সহযোগিতা করেছেন বায়েজিদ বোস্তামি. গোবিন্দ ঘোষাল, কাজী জাকির হোসেন ও শান্তি দাস নামে এলাকার আরো চার যুবক।
তুলনামূলক খুব কম খরচে সহজ এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে অগ্নিকাণ্ড দ্রুত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে শিল্প কলকারখানা রক্ষা ও শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চত করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি পটুয়াখালী শহরে একটি পোশাক তৈরির কারখানায় মিন্টুর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি কিভাবে অগ্নিকাণ্ড তাৎক্ষনিক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব তা প্রদর্শন করা হয়। ঐ পোষাক কারখানার প্রতিটি টেবিলে প্রযুক্তির দুইটি অন-অফ সুইজ সংযুক্ত করে। পরে কারখানার প্রবেশ মুখে বিদ্যুতের সর্ট সার্কিটের মাধ্যমে ঝুট কাপড়ে আগুন জ্বলে উঠলে তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে প্রযুক্তির বিকল্প বিদ্যুৎ বাতি জ্বলে উঠে এবং অটো স্যান্ডবাই পাম্পের মাধ্যমে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসার প্রযুক্তি প্রদর্শন করেন মিন্টু ও তার সহযোগীরা।
মিন্টু তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে বলেন, পোষাক কারখানার প্রতিটি ফ্লোরে প্রত্যেক শ্রমিকের টেবিলে দুইাট অন-অফ সুইজ সংযুক্ত থাকবে। যে কোনো ফ্লোরে বিদ্যুতের সর্ট সার্কিট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো টেবিলের একটি সুইজ অফ করলেই প্রযুক্তি যন্ত্রটি সেই ফ্লোরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে বিকল্প ডিসি ভোল্টের বাতি জ্বালে উঠবে এবং তাৎক্ষণিক স্যান্ডবাই ডিজেল চালিত পানির পাম্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পাম্পের নলগুলো দিয়ে পানি সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে।
মিন্টু আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দমকল কর্মীরা আসার আগেই তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে জলাধার বা গভীর নলকূপের পানিতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। এছাড়াও যে কোনো দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক ভবনের পাওয়ার কন্ট্রোল কক্ষ ও শ্রমিকরা ডিজিটাল ডিসপ্লের মাধ্যমে সকল সংকেত পেয়ে যাবে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষয়ক্ষতি একেবারেই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।
প্রযুক্তির প্রদর্শনী দেখে আশাবাদী কারখানার পরিচালক, শ্রমিক, কর্মচারীরা। সেই সাথে স্থানীয় সমাজ সেবক ও সংগঠকরাও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে মিন্টুর এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে সরকার ও বিজেএমই’র সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেছেন।
বেলাল হোসেন মিন্টু’র বাড়ি পটুয়াখালী শহরের কাটপট্টি এলাকায়। ইলেট্রিক মেকানিক্যাল কাজে তার ঝোঁক ছোট বেলা থেকেই। একারণে মাধ্যমিক পরীক্ষাটা তার দেওয়া হয়নি।
বেলাল হোসেন বলেন. আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় মাধ্যম পোষাক কারখানা। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ডে শ্রমিকদের মৃত্যু আর সম্পদহানীসহ এ শিল্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জিএসপি সুবিধা বঞ্চিতও হচ্ছি আমরা।
স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক এই প্রযুক্তি প্রদর্শন করলেও মিন্টু তার এই প্রযুক্তি টেকসই রূপান্তরে তৈরি পোষাক কারখানাসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে চান।