প্রতিবছরের ন্যায় চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর সূত্রে জানা গেছে, এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮। গতবার পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন। এর মধ্য উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। অংশগ্রহণ করা মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে সব বোর্ড মিলিয়ে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে গতবছর দেশে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি, এবারে দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ ও তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারা বেশ ইতিবাচক। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।
প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, এ বছর গড় পাসের হার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৯৩ দশমিক ১৫, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৭১, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৯৬ দশমিক ২৭, যশোর শিক্ষা বোর্ডে ৯৩ দশমিক শূন্য ৯, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ৯১ দশমিক ১২, সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৯৬ দশমিক ৭৮ এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৮০। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ও পরিবর্তীত নিয়মের এই পরীক্ষায় এই সার্বিক চিত্র বেশ আশাব্যাঞ্জক।
উপরের সংখ্যাগুলো খেয়াল করলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বিভিন্ন কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। করোনার বদলে যাওয়া পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে। আর যারা এবছর পাস করেছে, তাদের মধ্যেও রয়েছে সঙ্কট! বর্তমান সময়ে এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‘জিপিএ ৫’। পাস করেছে কিন্তু ‘জিপিএ ৫’ পায়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। বহুবছর ধরেই অভিভাবক মহলের মধ্যে একটি গণচাহিদা তৈরি হয়েছে, তাদের সন্তান অবশ্যই জিপিএ ৫ পাবে! জিপিএ ৫ এর নীচের গ্রেডগুলো যেন কোন অর্জনই না। তাই চূড়ান্ত অর্জন ওই জিপিএ ৫ পাবার জন্য পরীক্ষার আগে পরে শিক্ষার্থীদের উপরে প্রচণ্ড চাপ থাকে, অল্প কিছু নম্বরের কারণে কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ না পেলে অনেকসময় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য নয়তো কাঙ্খিত গ্রেড না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে আত্মহননের পথও বেছে নিতে দেখা গেছে বিগত বছরগুলোতে। এবছর সেরকম কিছু যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের অভিভাবকসহ পরিবারের সবার বিষয়টির দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। তাদের সঙ্গে কোনো ধরণের নেতিবাচক আচরণ না করাসহ দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার, কৃতকার্য সব শিক্ষার্থী যেনো কলেজ পর্যায়ে ভর্তি হতে পারে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পাস করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে কলেজে আসন সংখ্যা কম। অনেকে পছন্দের কলেজতো দূরের কথা, কোনো কলেজেই ভর্তি না হতে পারার শঙ্কায় আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। সবশেষে যারা এবছর কৃতকার্য হয়েছে তাদের শুভেচ্ছা, আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে প্রতিও ভালোবাসা এবং সামনের বছরগুলোর জন্য শুভ কামনা।