নির্যাতন ও গণহত্যার মতো পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।
শুনানির দ্বিতীয় দিনে অংশ নিয়েছেন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। শুনানিতে অংশ নিয়ে রাখাইনে সহিংসতার কথা স্বীকার করলেও একে কোনোভাবেই গণহত্যা বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের পক্ষে শুনানির সূচনা বক্তব্যে সু চি বলেন: দুঃখজনকভাবে গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের একটি অসম্পূর্ণ, ভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করেছে৷ তবে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি জটিল। রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ‘দুর্দশার’ কথাও এসময় স্বীকার করেন তিনি৷
কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা ও অন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার কথা উল্লেখ করেন৷ পাশাপাশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া চুক্তির কথাও তুলে ধরেন তিনি৷ তিনি বলেন: রাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে অন্যায়ে জড়িত থাকা সৈনিক ও অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার করছে, শাস্তিও দিচ্ছে৷ তারপরও কিভাবে একে গণহত্যার প্রচেষ্টা বলা যায়? এখন পর্যন্ত সেনা সদস্যদের ব্যাপারে জোর দেয়া হলেও অচিরেই জড়িত বেসামরিক নাগরিকদের বিপক্ষেও ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
সু চি’র বক্তব্য ভালভাবে খেয়াল করলো দেখা যায়, অধঃপতনের শেষ সীমায় পৌঁছে তিনি আসলে চতুরতার সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির দায় এড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানে সাক্ষী দিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের তিন প্রতিনিধি। পর্যবেক্ষক হিসেবে আছে বাংলাদেশ। সামনের দিনগুলোতে তাদের কথা শুনবেন বিজ্ঞ আদালত, যুক্তি-তর্ক-তথ্যে আদালতের কর্মকাণ্ডে গতি আসবে বলে আমরা ধারণা করছি।
প্রথম দিনের শুনানিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের গণহত্যা মেনে নেয়া যায় না বলে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে জানিয়েছে গাম্বিয়া। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন চালিয়েছে মিয়ানমার-এমন অভিযোগ এনে গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি। তাদের এই পদক্ষেপে সাহায্য করছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন, বাংলাদেশও সর্বাত্মক সহায়তা করছে।
এছাড়া মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা শুরু করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের বেশ কিছু সংগঠন। মিয়ানমারকে বয়কট করার আহবান জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলার শুনানির সময় বিচারের রায়টা যেন তাদের পক্ষে আসে সেজন্য কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রার্থনা করেছেন রোহিঙ্গারা।
সব মিলিয়ে প্রায় ঝিমিয়ে পড়া বিষয়টি অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছে। যার ফলে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির একটি সুষ্ঠু সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। সেইসঙ্গে বাংলাদেশও কিছুটা আত্মবিশ্বাসী হয়েছে বলা যেতে পারে। তবে এই পরিস্থিতিতে আত্মতুষ্টির সময় এখনো আসেনি বলে আমরা মনে করি। সবধরণের কূটনৈতিক যোগাযোগ ও কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এই আমাদের প্রত্যাশা।