`সমন্বিত রেফারেল’র মাধ্যমে সহিংসতায় আক্রান্তদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে’
আন্তর্জাতিক নারীদিবসে ব্র্যাকের সংলাপ

জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ভুক্তভোগীদের জন্য শক্তিশালী সেবা ব্যবস্থা গড়ে না তোলা পর্যন্ত জেন্ডারসমতা অর্জিত হবে না। বিশেষজ্ঞ এবং বক্তাবৃন্দ ঢাকায় অনুষ্ঠিত “জেন্ডার সহিংসতায় রিপোর্টিং ও রেফারাল পদ্ধতি: ‘আর না’ পাইলট প্রকল্প এবং সংযোগ সেবা ম্যাপিং থেকে পাওয়া শিক্ষা” শীর্ষক এক সংলাপে এই মত ব্যক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে আজ সোমবার ৭ই মার্চ ব্র্যাক তার মহাখালীর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। এতে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা রিপোর্ট করা এবং ভুক্তভোগীদের সহায়তায় রেফারাল পদ্ধতির ব্যবহার বিষয়ক ব্র্যাকের দুটি সাম্প্রতিক উদ্যোগ থেকে পাওয়া শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
সংলাপ অনুষ্ঠানে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক একেএম মফিজুল ইসলাম, ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস ও ডাইভারসিটি বিষয়ক পরিচালক নবনীতা চৌধুরী ও একই কর্মসূচির অ্যাডভোকেসি প্রধান তাকবীর হুদা, সেফগার্ডিং বিষয়ক পরিচালক জেনেফা জব্বার এবং প্রখ্যাত অভিনেত্রী ডা. আজমেরি হক বাঁধন। ড. শেখ মুসলিমা মুন, অতিরিক্ত পরিচালক (উপসচিব), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর (DWA), মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতার মোকাবেলায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও নারী আন্দোলনকারীরা আজ একসঙ্গে আলোচনায় বসেছে, এটা সত্যিই ইতিবাচক। আমরা অতীতেও এই ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করবো বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “এই বিষয়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত থাকাটা খুব জরুরি। ব্র্যাকের বড় শক্তি মাঠকর্মীদের মাধ্যমে আমরা সহিংসতার যে চিত্র দেখতে পেয়েছি, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। জেন্ডার সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা যাতে শারীরিক-মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেন সে লক্ষ্যে তাঁদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে।”
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সহিংসতার শিকার নারীদের সাইকো-সোশ্যাল কাউন্সেলের পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।”
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস ও ডাইভারসিটি বিষয়ক পরিচালক নবনীতা চৌধুরী বলেন, ব্র্যাক মনে করে সহিংসতার শিকার নারীর পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সকলের। সে বিশ্বাস থেকেই ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের সকল কর্মীকে সহিংসতার ঘটনা চিহ্নিতকরণ এবং এর খবর রিপোর্ট করে প্রয়োজনীয় সহায়তার সঙ্গে সহিংসতার শিকার নারীদের যুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে ‘আর না’ পাইলট প্রকল্পের আওতায়। তিনি “আর না” পাইলট প্রকল্পের আওতায় জেন্ডার সহিংসতার ঘটনা রিপোর্ট করার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, রংপুর ও সাতক্ষীরা জেলায় ব্র্যাকের ৫০টি শাখায় কর্মরত ৮০০ জনের বেশি মাঠপর্যায়ের কর্মীকে ‘আর না’ ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে এসব সহিংসতার ঘটনা রিপোর্ট করার পদ্ধতি সম্পর্কে নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নিজেদের ট্যাবে ইনস্টল করা অ্যাপটি ব্যবহার করে তাঁরা এসব ঘটনা রিপোর্ট করেন এবং এরপর কেস ম্যানেজারদের একটি দল ভুক্তভোগীকে প্রয়োজনীয় জরুরি সেবাগুলোর সঙ্গে যুক্ত করতে কাজ করেন।”
ব্র্যাকের সেফগার্ডিং বিষয়ক পরিচালক জেনেফা জব্বার সংযোগ ওয়েবসাইটটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরে জানান, জেন্ডার সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা যাতে সহজে সহায়তা বিষয়ক তথ্যাদি পেতে পারেন সে উদ্দেশ্যে ব্র্যাক এসব তথ্য সন্নিবেশ করে এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে। এটি তৈরি করার আগে দেশের ৬১টি জেলার ৪৩৫ উপজেলায় এক্ষেত্রে কী ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা বিদ্যমান তা জানতে একটি নিবিড় “ম্যাপিং” করা হয়। ওয়েবসাইটটিতে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা, আইনগত, মনোসামাজিক, সেফহোম/আশ্রয়কেন্দ্র ও থানাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেণীবদ্ধ তথ্য পাওয়া যায়।
প্রখ্যাত অভিনেত্রী ডা. আজমেরি হক বাঁধন পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এসব সহিংসতায় সৃষ্ট আঘাত কাটিয়ে উঠতে পরিবারকে পাশে পাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। একটি সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হিসেবে পাওয়া অর্থ কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ভর্তি ও নিজের জীবন পুনরায় গড়ে তুলতে কীভাবে সহায়তা করেছিল সেই অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেন তিনি।
সুপরিচিত নারী অধিকার কর্মী শিরিন হক তার বক্তব্যে বলেন, “ভুক্তভোগীদের মনোবল না হারিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এসব বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ এবং সেবা প্রদানের জন্য ব্র্যাক অবশ্যই প্রশংসার দাবীদার। তবে সহিংসতার সংস্কৃতিকে রোধ করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সবাইকে আরও এগিয়ে আসতে হবে।”