সর্ব শ্রেণির মানুষের জন্যই মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় রয়েছে। কৃষকদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, শ্রমিকদের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়, শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজসেবা মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশুদের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পুলিশের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগগ্রস্ত মানুষদের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীদের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, সাংবাদিকদের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মানুষের গৃহ সমস্যা সমাধানের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইনী সমস্যা সমাধানের জন্য আইন মন্ত্রণালয় ও যোগাযোগ সমস্যা সমাধানের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রভৃতি।
সমাজে সংঘটিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েরই এগিয়ে আসা উচিত। যেমন পুলিশের গুলিতে চোখ হারালো সিদ্দিকুর। তার চিকিৎসার দায়িত্বও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই নেয়া উচিত। সাংবাদিকদের নানা সমস্যার সমাধানে দায়িত্ব নিতে হবে তথ্য মন্ত্রণালয়কে। প্রায়ই সংবাদপত্রে সংস্কৃতিকর্মীদের বিনা চিকিৎসায় ভোগান্তির খবর বের হয়। তারা তখন প্রধানমন্ত্রী’র শরণাপন্ন হন। প্রধানমন্ত্রীকেও তাদের সাহায্য করতে দেখা যায়। এই রীতিটা বদলে যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর জন্য দায়িত্বটা ঠিক করা হতো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
নারী, শিশু নির্যাতনে বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে। প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নিতে হবে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়কে। কৃষকদের দায়িত্ব নিতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয়কে। শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে হবে শ্রম মন্ত্রণালয়কে। যুবকদের জন্য যুব মন্ত্রণালয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্যই ক্রিয়াশীল মন্ত্রণালয় রয়েছে। সব দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর নেয়া কি মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যর্থতা নয়? একজন অসুস্থ কবি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে সাহায্য নেবেন কেন? এক্ষেত্রে সংস্কৃতিমন্ত্রীকে দায় এড়াতে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি তার দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দিতে পারেন না? বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও কন্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বারের চিকিৎসার দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নিতে পারেনা? সাংবাদিকদের মাঝেও দেখা যায় দুঃস্থ সাংবাদিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল হতে সাহায্য নিতে। দুঃস্থ বিশেষণটাতো মর্যাদার নয়, করুণার। এই বিশেষণটা সাংবাদিকদের ললাটে কেন জুটছে এর জবাবটা কি তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চাইলে অযৌক্তিক হবে?
সড়ক পথে অহরহ দুর্ঘটনা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় হারাচ্ছে অনেকেই জীবন ও স্বজন। পঙ্গু হয়ে পার করছে দুঃসহ জীবন। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে কেন সড়কমন্ত্রীকে নির্দেশ দেয়া হয় না? সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্যই মন্ত্রণালয় রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যদি সবার দায় নিজে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পালন করতে বাধ্য করতেন তাহলে মানুষ অনেক বেশী সুফল পেত। মন্ত্রীরা তখন সতর্ক থাকত।
গ্রাম শহরে এখনও এরকম ঘটনা ঘটে যে ভাতিজা অপকর্ম করে বেড়ায় আর চাচা ভুক্তভোগীদের কাছে ক্ষমা চায়। ভাতিজা অপকর্ম অব্যাহত রাখে। চাচার দায় স্বীকারে তার মধ্যে কোন পরিবর্তন হয় না। এক্ষেত্রে চাচাদের ভূমিকা হয় দু’রকম: এক. ভাতিজাকে বিপদমুক্ত রেখে তার অপকর্মের ধারাবাহিকতা রক্ষা । দু্ই. ভাতিজার কাছে চাচার অসহায়ত্বের ভূমিকা। কারণ চাচার শাসন ভাতিজা মানছে না।
আমাদের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিষয়টাও সেই চাচা ভাতিজার মত কিনা এই ভাবনাটা একেবারে অমূলক কি ?এভাবে মন্ত্রীদের দায় যদি ধারাবাহিকভাবে প্রধানমন্ত্রী বহন করে যেতেই থাকেন তাহলে মন্ত্রীদের ব্যর্থতা চলতেই থাকবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)।