বেঁচে থাকলে বাংলার ফিল্ম জগতের নক্ষত্র উত্তম কুমারের আজ বয়স হতো ৯০ বছর। ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা উত্তম কুমার যিনি সবার কাছে মহানায়ক হয়ে বেঁচে আছেন।
তিনি একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন। সত্তর দশকের বাংলার হলগুলোতে শুধুই উত্তমের পোস্টারের ছবি। তখনকার সময়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নায়িকারা উত্তম বলতে অজ্ঞান থাকতেন। যেখানেই উত্তম যেতেন সেখানেই তাকে শুনতে হত উত্তম তোমায় খুব ভালোবাসি।
বাংলার ফিল্ম জগতে উত্তম-সুচিত্রা জুটি সেসময় মনের এককোণে শিহরণ জাগিয়েছিল। সেই শিহরণ এখনো সিনেপ্রেমীদের মনে দোলা দেয়। শুধু সুচিত্রা নয় সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী, মাধবী, শর্মিলা নায়িকারা বড় পর্দায় কাজ করেছেন উত্তম কুমারের সঙ্গে।
সাধারণ পরিবার উঠে আসা উত্তম প্রথমেই বড় পর্দায় সফলতা পাননি। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একের পর এক সিনেমায় ফ্লপ নায়ক তিনি। ভয় পাননি, সাহস আর পরিশ্রমের কারণে ১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত সিনেমা ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। সেই যে শুরু। এরপর টালিউড ইন্ডাস্ট্রির ফ্লপ মাস্টার হয়ে গেলেন রোমান্টিক নায়ক উত্তমকুমার।
‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমার পর ততদিনে উত্তম বুঝে গিয়েছিলেন তাকে ঠিক কী করতে হবে। কীভাবে দর্শকের সামনে নিজেকে পরিবেশন করতে হবে। পরবর্তীতে আকাশ ছোয়া খ্যাতি পেলেও বাংলার মহানায়ক উত্তম কুমার পা রাখতেন মাটিতেই।
শুধু সিনেমায় নয় উত্তম কুমার তার অভিনয়ে আলো মঞ্চেও ছড়িয়েছিলেন। তার আরেকটি ভালো বড় গুণ ছিল কখনো কোনো শিল্পী সমস্যায় পড়লে আগে এগিয়ে যেতেন তিনি। বিশেষ করে কেউ আর্থিক সমস্যায় পড়লে সাহায্য করতে দ্বিধা করতেন না তিনি।
প্রায় দু’শর বেশি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করা উত্তম একাধিক হিন্দি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। ১৯৫৬ সালে এ অভিনেতা প্রথম প্রযোজক হয়ে ‘হারানো সুর’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন। সেখানেও তিনি সুপারহিট। সে ছবির জন্য রাষ্ট্রপতি ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট’ সম্মান পান তিনি।
তার অভিনীত সফল ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নবীন যাত্রা (১৯৫৩) লাখ টাকা (১৯৫৩) বৌ ঠাকুরানীর হাট (১৯৫৩) সদানন্দের মেলা (১৯৫৪) ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪)মনের ময়ূর (১৯৫৪) মরণের পারে (১৯৫৪) মন্ত্র শক্তি (১৯৫৪) কল্যাণী (১৯৫৪) গৃহপ্রবেশ (১৯৫৪) চাঁপাডাঙার বউ(১৯৫৪) ব্রতচারিনী (১৯৫৪) বকুল (১৯৫৪) বিধিলিপি (১৯৫৪) অনুপমা (১৯৫৪) অন্নপূর্ণার মন্দির (১৯৫৪) অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪) সাঁঝের প্রদীপ (১৯৫৫) উপহার (১৯৫৫) শাপ মোচন (১৯৫৫) হ্রদ (১৯৫৫) সবার উপরে (১৯৫৫) কঙ্কাবতীর ঘাট (১৯৫৫) রাইকমল (১৯৫৫)।
১৯২৬ সালে ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন উত্তম কুমার। তার বাড়ির নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। তিন সন্তানের মধ্যে উত্তম কুমার ছিলেন সবার বড়। তার পিতার নাম সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম চপলা দেবী। তার ছোট ভাই তরুণ কুমার একজন শক্তিশালী অভিনেতা ছিলেন। তারা একত্রে বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচিত্রে অভিনয় করেছেন।
উত্তম কুমার গৌরী দেবীকে বিয়ে করেন তাদের একমাত্র সন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায় মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ক্যান্সারে মারা যান। গৌরব চট্টোপাধ্যায় উত্তম কুমারের একমাত্র নাতি, বর্তমানে টালিগঞ্জের জনপ্রিয় ব্যস্ত অভিনেতা।
১৯৬৩ সালে উত্তম কুমার তার পরিবার ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ১৭ বছর তিনি তৎকালীন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বসবাস করেন তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।