নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আগামী রোববার থেকে সারাদেশে ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এ ঘোষণা দেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন: শিক্ষার্থীদের চেতনা আমরা বুঝতে পেরেছি। এখন থেকে কেউ সড়ক আইন অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোববার থেকে সারা দেশে ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করা হচ্ছে। সেখানে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভিং, নবায়ন না করা, হেলপার কর্তৃক ড্রাইভিং অর্থাৎ ট্রাফিক আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে আমরা কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মোটরসাইকেলে তিনজন চড়া, সিগন্যাল ভায়োলেশন করা, উল্টোপথে যাওয়া এবং প্রভাবশালীদের আইন না মানার যে অপচেষ্টা সেগুলোর বিরুদ্ধে আমরা এই ট্রাফিক সপ্তাহে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শিক্ষার্থীদের এই কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমাদের কার্যক্রমে আগেও স্কাউট এবং গার্লস গাইডরা সহযোগিতা করেছে। এবারও তারা থাকবে। শিক্ষার্থীরা চাইলে সহযোগিতা করতে পারে।
ছাত্রদের আন্দোলনে একমত জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন: সাধারণ ছাত্ররা যে অভিপ্রায় নিয়ে মাঠে নেমেছে তার জন্য তাদের স্যালুট করি। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যে কাজটা অনেক আগে করার কথা ছিল তারা আজকে সেই কাজটি করার জন্য একটি নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ছাত্র-ছাত্রীরা কোনোভাবেই আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। বরং আমাদের পরিপূরক। ভবিষ্যতে ট্রাফিক আইনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সাহস আমরা তাদের কাছ থেকে পেয়েছি।
তিনি বলেন: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সর্মথন রয়েছে। তবে আন্দোলনের ফলে জনগণ দুর্ভোগে পড়েছে। তাই এ জনদুর্ভোগ দীর্ঘদিন চলতে পারে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন: ঢাকা শহরের বাস টার্মিনালে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এছাড়া অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ট্রাফিক পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
তিনি বলেন: শুধু যে যানবাহনকে দায়ী করব বিষয়টি এমন নয়। ফুটওভারব্রিজ, আন্ডার পাস থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের মানুষ সেগুলো ব্যবহার করে না। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌঁড়ে রাস্তা পার হয়। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আইন না মানার সংস্কৃতি। আমরা ঢাকা শহরের কোনো কোনো এলাকায় গেলে খুব ট্রাফিক আইন মানি। কিন্তু বাইরে আসলে আর মানি না। এই মানুষ আমরা যখন লন্ডন বা টোকিওতে যাই তখন আমরা একটা ময়লা কোথাও ফেলি না। নির্দিষ্ট ডাস্টবিন না পাওয়া পর্যন্ত হাতে নিয়ে ঘুরি। আর ঢাকা শহরে আমরা যত্রতত্র ময়লা ফেলে দেই।
তিনি বলেন: ট্রাফিক আইন মানার সংস্কৃতি যদি আমরা চালু না করি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহযোগিতা না করি তাহলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। আসুন আমরা বিশৃঙ্খলা নয়, শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এই অবস্থার থেকে উত্তরণ ঘটাই, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সবাইকে উদ্ধুদ্ধ করি।
এসময় তিনি আন্দোলন আর দীর্ঘায়িত না করার জন্যও শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান।