ভাসানচর থেকে ফিরে: রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাস হিসেবে দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে ৪০ কিলোমিটার এবং হাতিয়া দ্বীপ উপজেলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নব্বইয়ে দশকে ডুবোচর থেকে চরে রূপ নেয়া ভাসানচর আদৌ মানুষের বসবাস উপযোগী করা সম্ভব হবে কিনা সে বিতর্ক পেছনে সরিয়ে এখন বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে।
নৌবাহিনীর সার্বিক তত্বাবধানে ১ হাজার ২শ’ একরের এই চর প্রস্তুত হচ্ছে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাস হিসেবে। সরকারের তরফে আশা করা হচ্ছে: ২০১৯ এর নভেম্বরের মধ্যে সকল কাজ শেষ করা সম্ভব হবে, এরপর সেখানে জায়গা পাবে অন্তত ১ লাখ রোহিঙ্গা।
ভাসানচরের ভৌগলিক অবস্থান
নোয়াখালী সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার, উপকূলবর্তী সুবর্ণচর থেকে ৫০ কিলোমিটার, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হাতিয়া সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন ও জনমানবশূন্য চর ভাসানচর। এটি আয়তনে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রায় মূল ভূখণ্ডের সমান। এর দক্ষিণে গাঙ্গুরিয়ার চর ও উত্তরে রয়েছে জাহাজিয়ার চর যা বর্তমানে স্বর্ণদ্বীপ নামে পরিচিত।
যেভাবে আজকের এ ভাসানচর
হাতিয়ার স্থানীয় জেলেরা সর্বপ্রথম ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মেঘনা এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় একটি ডুবোচরের অস্তিত্ব খুঁজে পান। পরবর্তী ৫ বছরের ব্যবধানে এটি চরে রূপ নিতে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চর আজকের ভূমি রূপ পায়। কোন জনবসতি গড়ে না ওঠা এবং মহিষের বাথান হিসেবে পরিচিত পাওয়ায় স্থানীয় জেলেরা এর নামকরণ করে ভাসানচর।
কথিত আছে, একসময় এখানে জলদস্যুদের বাস ছিলো। তাই মাছ ধরা নৌকা এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা লাইটার জাহাজগুলো চরটি এড়িয়ে চলতো। তবে, ২০০০ সালের পর ধীরে ধীরে চরটির প্রতি নজর আনে বাংলাদেশ সরকার। ২০০৫-০৬ সালের দিকে বাংলাদেশ বন বিভাগ এখানে বনায়নের উদ্যোগ নেয়। এখনও চরটিতে গেলে দেখা যায় সারি সারি কেওড়া গাছ। তবে উন্নয়ন কাজের জন্য বেশ কিছু গাছ কাটা পড়েছে।
স্থানীয় জনগণ যা ভাবছে
রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় শঙ্কিত হাতিয়ার স্থানীয় জনগণ। তাদের বক্তব্য: ‘হাতিয়ায় এমনিতে ছয় লাখ লোকের বাস, সেখানে যদি আবার নতুন করে হাতিয়ার নিকটবর্তী চরে এক লাখ মানুষকে নতুন করে এনে রাখা হয় তাহলে ভারসম্য নষ্ট হবে এই দ্বীপ উপজেলার।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে শঙ্কার কথাও শোনালেন স্থানীয় মামুন বশির। পেশায় তিনি একজন জেলে। চ্যানেল আই অনলাইকে তিনি বলেন: আমরা যতদূর জেনেছি রোহিঙ্গাদের মূল পেশা হচ্ছে মাছ ধরা। তাদের যদি এখানে এনে রাখা হয় তাহলে মাছ ধরার পাশাপাশি জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। আর এতে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেলে কর্মসংস্থান নষ্ট হবে স্থানীয় জনগণের।
স্থানীয় বাসিন্দা আনিস অবশ্য কথা বললেন ভিন্ন প্রসঙ্গে। তার বক্তব্য: রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ার কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না। তারা ছড়িয়ে পড়লে আমাদের এখানকার দীর্ঘদিনের যে সংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়তে পারে এইডসের মতো মরণঘাতী রোগ।
‘যতদূর শুনেছি তাদের কেউ কেউ এ রোগের ভাইরাস বহণ করছে। এছাড়া, কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকায় থাকা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাই আমাদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা কাজ করছে’, বলেন আনিস।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনগণকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, ‘রোহিঙ্গারা কোনভাবেই মূল ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না।’