চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভাসানচরে কেমন হবে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাস

পর্ব-১

ভাসানচর থেকে ফিরে: আশ্রয়ণ ‘৩’ আবাসন প্রকল্পের আওতায় এক লাখ রোহিঙ্গা অস্থায়ীভাবে জায়গা পেতে যাচ্ছে ভাসানচরে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ৩ শ’ ৩২ কোটি টাকার প্রকল্পেরও অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং মানবাধিকার সংগঠন গুলোর বিরোধিতা থাকলেও সরকার বলছে মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের উখিয়া এবং কুতুপালং থেকে সরিয়ে ভাসান চরে নেওয়া হবে।

এ প্রকল্পের আওতায়, ১ লাখ ৩ হাজার ২০০ মানুষের বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হচ্ছে।  এছাড়া ভাসানচরের অভ্যন্তরে সড়ক, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, নলকূপ বসানোসহ যাবতীয় অবকাঠামো তৈরি করা হবে।

মাইজদী টু ভাসানচর
ভাসানচরের এই প্রকল্প সম্পর্কে নানা ধরনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে চ্যানেল আই অনলাইন সরেজমিনে দেখতে চাইলো প্রকল্পের অগ্রগতি। সেখানে পৌঁছাতে প্রথমে নোয়াখালী সদরের প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু মাইজদী থেকে যেতে হয় উপকূলবর্তী চেয়ারম্যান ঘাটে। তবে চেয়ারম্যান ঘাট থেকে সরাসরি ভাসানচর যাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। কারণ, মূল ভূখণ্ড থেকে ভাসানচর যেতে চাইলে মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত ট্রলার ভাড়া করা ছাড়া উপায় নেই। এজন্য গুনতে হবে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। অবশ্য এর বিকল্প হিসেবে প্রথমে চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া হয়ে সেখান থেকে যাওয়া যায় ভাসানচর।

চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়ায় যাওয়া সি-ট্রাকগুলো অনেক সময় নষ্ট থাকে। তাই শরনাপন্ন হতে হয় ট্রলারের। ৫০ টাকার ভাড়া সেখানে ১৫০ টাকা। কিন্তু দেড় ঘন্টার প্রচেষ্টায়ও এ প্রতিবেদক ট্রলারে উঠতে ব্যর্থ হলো। ট্রলারে করে চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া পৌঁছাতে সময় লাগে আবার আড়াই থেকে তিন ঘন্টা।  তাই বিকল্প বাহন স্পিড বোর্ড। ভাড়া ৪০০ টাকা, সময় ২৭ মিনিট।

হাতিয়া পৌঁছে এবারের গন্তব্য ভাসানচর। তবে, বিধিবাম…। জোয়ার ভাটার হিসাব মিলিয়ে দুপুর দুইটায় রওনা দিয়ে আবারও ফিরে আসা অনেকটাই দুষ্কর। তাই সেদিনের মতো সেখানেই অবস্থান। পরদিন সকালে আবারও নলচিরা ঘাটে, গন্তব্য ভাষানচর। কিন্তু যেতে হবে হাতিয়া থেকে মালবাহী কোন ট্রলারে। এখান থেকেও নেই কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। সৌভাগ্য ক্রমে মিলে গেল ট্রলার। সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রা শুরু করে সাড়ে তিন ঘন্টা পর দূর থেকে আবছা সবুজ চোখে মিলতে শুরু করলো। মাঝিদের জিজ্ঞেস করে জানা গেল ওই জায়গার নামই ভাসানচর।

২০১৯’র নভেম্বরের আগে কাজ শেষ করতে চলছে কর্মযজ্ঞ

যতোই কাছে যেতে থাকলাম আবছা থেকে স্পষ্ট হতে থাকলো ভাসানচরের কর্মযজ্ঞ। তবে ঘাটে গিয়ে জানা গেল, এখন পর্যন্ত দেশিয় সংবাদকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত নয় চরটি। তাই সরুগলি খুঁজে ভাসানচর নামলাম।

ভাসানচরের বর্তমান চিত্র
চরে নামার পর যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই চলছে কর্মযজ্ঞ। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বেড়িবাধ এবং সাইক্লোন সেন্টারের কাজ শেষ করতে কাজ চলছে পুরোদমে। উন্নয়ন কাজের সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত রয়েছে ৩০টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যারা বিভিন্ন প্যাকেজে এখানে কাজ করছে। প্রতি প্রাকেজে ১২টি করে সেন্টার। স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ১২০টি প্লট নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে ১২টি করে মোট ১৪৪০টি ভবন নির্মাণ করা হবে।

এ চরে কাজ করছে প্রায় ১ হাজার ২শ’ শ্রমিক। তাদের অধিকাংশই এসেছেন উত্তরবঙ্গ থেকে। কথা হলো সেখানে কাজ করা রমিজ উদ্দিনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে; এখানে তার মতো আর অনেকেই উপার্জনের আশায় এসেছেন।কেমন কাটছে রমিজের ভাসানচরের দিন, জানতে চাইলে বললেন: আমাদের গ্রামের মোট ১২জন এখানে কাজ করছি। আসলাম মোল্লা আমাদের এখানে নিয়ে আসছেন।

আয় কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন: আমরা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে এখানে কাজ করছি। প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ টাকার মতো আসে। সবাই ওভার টাইমেও কাজ করি। সেক্ষেত্রে ৮০০-৮৫০ টাকার মতো প্রতিদিন আসে।

তবে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় যেমন নেই বিদ্যুতের সুবিধা, তেমনই খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের জন্য নির্ভর করতে হয় মূল ভূখণ্ডের দিকে।

(ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশে তুলে ধরা হবে ভাসানচরকে বসবাস উপযোগী করে তোলার সার্বিক চিত্র এবং সেখানকার জীবনধারা)