চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণের নির্বাচন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য ইতিহাস হয়ে থাকবে। কেননা এই নির্বাচনের ফলাফলের উপরেই নির্ভর করছে নিকট ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি কি হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই নির্ধারণ হয়ে যাবে, এদেশ কি জঙ্গিবাদের চারণভুমি হবে নাকি মানবিক সোনার বাংলাদেশ হবে।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আওয়ামী বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টের মিটিং এ, সমাবেশে, সংবাদ সম্মেলনে, এমনকি তাদের ঘরোয়া সভাগুলোতেও একাধিকবার বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হয়েছে । বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদিবসে মিথ্যা জন্ম উৎসব পালন করা বিএনপির নেতা-কর্মীরাও এই ঐক্যফ্রন্টের বড় অংশীদার, বিএনপির মিত্রশক্তি স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত শিবিরতো আছেই ।

Bkash July

বঙ্গবন্ধু যে সকল কিছুর উর্দ্ধে, বাঙালির অবিসংবাদিত সর্বজনীন একজন নেতা, তা একাদশ জাতীয় নির্বাচন আবারও সকলকে বুঝিয়ে দিলো । এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে । ব্যরেলের সব পচা আপেলগুলোকে আমরা একত্রিত হতে দেখেছি নীতি আদর্শ এমনকি ঐতিহাসিক আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়ে পর্যন্ত।

অনেকে বলেন এই নির্বাচন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ, আমি মনে করি এই নির্বাচন সাম্প্রতিক প্রেক্ষপটে বাঙালির জন্য মুক্তিযুদ্ধের চাইতেও এক ধাপ বেশি গুরুত্ব বহন করে। কারণ, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ, বীরাঙ্গনা আর বীর যোদ্ধাসহ সকল বাঙালির আত্মত্যাগ ভুলুন্ঠিত হবে যদি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের কোন অপশক্তি বাংলার রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে। সাত দিনও সময় নেবে না তারা এই সোনার বাংলাকে পাকিস্তান নামক নরকে পরিণত করতে। সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সমুন্বত রাখতে এই নির্বাচনই একমাত্র পথ।

Reneta June

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার জয়লাভ করে পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যদি তার দলে এবং সরকারে কিছু গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন বিএনপি জামাত জোট রাজনৈতিকভাবে বাংলার মাটি থেকে বিলীন হয়ে যাবে। কেন এমনটা মনে হওয়ার কারণ ?

সরকারি দল কি তাদের ধ্বংস করে দেবে ? না, বিশ্লেষকদের অভিমত ক্যান্টনমেন্ট থেকে অবৈধ পন্থায় জেনারেল জিয়াউর রহমানের গড়া এই দলটি গোড়া থেকেই যুদ্ধাপরাধী বাংলাদেশ বিরোধী শক্তিকে পুনর্বাসিত করে এদেশের সাধারণ জনগনের কাছে নেতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে ।

খালেদা জিয়ার দুইবারের শাসনামলে অপরাজনীতি, সীমাহীন দুর্নীতি, দলীয় সন্ত্রাসের তাণ্ডব, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিএনপির বারবার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ হত্যা, তারেক রহমানের মতো একজন আইনের চোখে অপরাধীকে দলের প্রধান হিসেবে গ্রহণ করাসহ আরও নানারকম গণবিরোধী সিদ্ধান্ত দলটিকে দেউলিয়া করে দিয়েছিল ।

সেই অবস্থান থেকে ড. কামাল হোসেন গং বিএনপিকে আবার টেনেটুনে কোনভাবে নির্বাচনের মাঠে তুলে এনেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়েও বিএনপি যুদ্ধাপরাধী জামাতকে ত্যাগ করতে পারেনি বা করেনি ।

উপরন্তু নিষিদ্ধ হওয়া জামাতকে নিজেদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনের সুযোগ করে দিয়ে বিএনপি পুনরায় প্রমাণ করেছে, মনস্তাত্ত্বিক কিংবা আদর্শিকভাবে জামাত এবং বিএনপি পৃথক কোন স্বত্ত্বা নয় । এই নির্বাচনে দেশের জনগনের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিএনপি-জামাত যদি রাজনৈতিকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে শতভাগ নিশ্চিত এদেশের জনগন আর কখনোই কোন মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী কিংবা তাদের মিত্রশক্তিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেবেনা ।

তখন এদেশের বিরোধী দল হোক, কিংবা যেকোন রাজনৈতক দলই হোক সকলকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু, ত্রিশ লক্ষ শহীদ, আর আমাদের পবিত্র বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগের মতো অনিবার্য সত্যগুলো স্বীকার করেই বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে হবে । সুতরাং এদিক থেকেও এই নির্বাচন বাঙালির জন্য একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

এই নির্বাচনে একটা ব্যপার লক্ষনীয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করতে একটি বিশেষ পক্ষ দারুণভাবে সক্রিয় । এই লৌহমানবী রাষ্ট্রনায়ককে পরাজিত করতে বিদেশি সাহায্য প্রার্থনা, গোপন ষড়যন্ত্র, অনবরত মিথ্যা রাজনীতি, নানারকম গুজব ছড়িয়ে দেশের পরিস্থিতি অস্তিতিশীল করা থেকে শুরু করে হেন কোন কাজ নেই যা তারা করছে না ।

শোনা যাচ্ছে তাকে সরাতে হাজার হাজার কোটি কালো টাকাও বিনিয়োগ করছে তারা । কিন্তু এই অপশক্তি কোনভাবেই সুবিধা করতে পারছে না । অথচ তাকে পরাজিত করার সবচাইতে যে সহজ কৌশলটি তারা করতে পারত তার ধারে কাছেও তারা যায়নি। হ্যাঁ, তাকে পরাজিত করার কৌশল ছিলো একটিই, আর সেই কৌশলটি হলো তার চেয়ে ভালো কাজ করে প্রমাণ করা যে, তারা শেখ হাসিনার চেয়ে এই দেশকে বেশি ভালোবাসে।

অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে পরাজিত করতে হলে শেখ হাসিনার চাইতে অধিকতর যোগ্য, অধিকতর ইতিবাচক, অধিকতর দেশপ্রেমিক কাউকে আসতে হবে। সেটা নিশ্চয় ছদ্মবেশি ড. কামাল হোসেন, দুর্নীতিগ্রস্ত খালেদা জিয়া কিংবা গ্রেনেড হামলাকারী তারেক রহমান নয়! একটা ব্যাপার খুবই পরিস্কার বাঙালি আর নিচের দিকে নামবে না কিংবা পেছনের দিকে যাবে না, সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে মন্ত্র শেখ হাসিনা শিখিয়ে দিয়েছেন তার থেকে এই দেশের জনগন আর বিচ্যুত হবে না ।

সুতরাং শেখ হাসিনাকে পরাজিত করতে চাইলে শেখ হাসিনার চাইতে উত্তম হয়ে আসতে হবে। আর তা হওয়ার জন্য দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষের জন্য কল্যাণমুখী কাজ করতে হবে । পেট্রোল বোমা মেরে কিংবা খামোশ বলে ভয় দেখিয়ে তা সম্ভব নয় ।

দেশের মঙ্গলের জন্য তাই এই মূহূর্তে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই । তার চাইতে অধিকতর ভালো কিছু চর্চার জন্যও যে একটা পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ বজায় রাখার জন্য হলেও রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন। বিজয়ের এই মাসে এই জাতি ভুল করবে না বলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View