জাতীয় নির্বাচন আনন্দমুখর করতে সুদৃঢ় নিরাপত্তা বলয় হাতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। যেকোন ধরণের অপতৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করতে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, নগর জুড়ে চারটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত থাকবে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভোটের পরিবেশ সংঘাতমুক্ত ও আনন্দমুখর রাখতে নগরীজুড়ে সুসংগঠিত সুদৃঢ় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। নগরীর প্রতিটি কেন্দ্র পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ৪-৫টি কেন্দ্র মিলিয়ে একটি করে টিম মোবাইল ডিউটিতে থাকবে।
মিরপুর, আব্দুল গনি রোড, গুলশান ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নির্বাচনের প্রতিটি প্রার্থী ও এজেন্টদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। নির্বাচন কমিশনের কর্তৃক অর্পিত সকল দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করা হবে। সব ধরনের ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে সমগ্র নগর জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপনের পাশাপাশি টহল টিম কাজ করবে।
রাজধানীজুড়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, নৌ বাহিনী, র্যাব সদস্যরা টহল ডিউটিতে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন: সকল সংস্থা মিলে ভোটের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে, যেন কোন ধরনের সংঘাত না হয়। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট শেষে বাড়ি ফিরবেন, তাদের নিরাপত্তায় যা যা ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তার সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে। গোয়োন্দা ও আইইডি বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। অগ্রিম তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা জনিত কোন হুমকি থাকলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভার্চুয়াল জগতে যেকোন ধরনের হুমকি, গুজব প্রতিরোধে তারা সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়াও যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, লাইসেন্সকৃত সকল অস্ত্র আমরা বিভিন্ন থানায় জমা নিয়েছি। প্রার্থী ব্যতীত কেউ কোন বৈধ অস্ত্র কেউ বহন বা প্রদর্শন করতে পারবেনা। যেসব স্থানে পেশীশক্তি প্রয়োগ হতে পারে বা বাধা আসতে পারে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তেমনভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাধাহীন সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগে সকল প্রস্তুতি চলমান আছে।
১৪টি পয়েন্ট থেকে ব্যালট পেপার বিতরণ ও জমা নেওয়া হবে। সেসব স্থানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। যেকোন ধরনের গোলযোগ কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণসহ সকল বাহিনীর সমন্বয়ে সুষ্ঠুভাবে অর্থবহ ভোট অনুষ্ঠানে আমরা বদ্ধপরিকর।
সুস্পষ্ট নিরাপত্তার কোন হুমকি নেই জানিয়ে তিনি বলেন: বিগত নির্বাচনের বিভিন্ন সংঘর্ষের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আমরা ছক সাজিয়েছি। কোন ভোটারের নিরাপত্তায় কোন হুমকি থাকলে ৯৯৯, কন্ট্রোলরুম বা যে কোন ভাবে পুলিশকে জানালে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিব।
নির্বাচনের দিন যান চলাচল বন্ধ থাকলেও বিদেশগামী যাত্রী, রোগী বা অন্যান্য যাত্রীদের ক্ষেত্রে বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারলে তার ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা শিথিল করা হবে। এজন্য ট্রাফিক বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এটি একেবারেই তথ্য নির্ভর নয়। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মী হিসেবে আইনের আলোকে কাজ করে থাকি। চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি ঢাকায় বিনা ওয়ারেন্ট বা সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পক্ষপাতের এই অভিযোগ সত্য নয়।