চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

প্যারাডাইস পেপারসে ৭ শতাধিক ভারতীয়র নাম

বিশ্বজুড়ে ধনী ও প্রভাবশালীদের গোপন সম্পদের হিসেবের নথি ফাঁস হওয়া নতুন ডাটাবেজ প্যারাডাইস পেপারসে ৭১৪ ভারতীয়র নামও রয়েছে। এদের মধ্যে আছেন দেশটির মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ ব্যবসায়ী, বলিউড তারকাসহ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

অথচ এই নথি ফাঁস হওয়ার ঠিক দু’দিন পরই ভারত সরকার উদযাপন করতে যাচ্ছে কালোটাকা বিরোধী দিবস। কালোটাকার দৌড়াত্ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে গত বছরের ৮ নভেম্বর দেশটির সরকার ৫০০ এবং ১০০০ রুপির নোট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল ঘোষণা করেছিল।

প্যারাডাইস পেপারস বিশ্বের ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেন ও মালিকানা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যের তথ্যভাণ্ডার বা  ডাটাবেজ, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পৃথিবীর ১৮০টি দেশের ধনী, সুপরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আর সেই ১৮০ দেশের তালিকায় ভারতের অবস্থান ১৯তম।

১ কোটি ৩৪ লাখ গোপন নথির সমন্বয়ে গঠিত এই ডাটাবেজে রয়েছে ১৪শ’ গিগাবাইটেরও বেশি ডাটা। নথিগুলোর প্রায় ৬৮ লাখ এসেছে অফশোর আইনি সেবা সংস্থা অ্যাপলবাই এবং কর্পোরেট সেবা সংস্থা এস্টেরা থেকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দেয়া তথ্য অনুসারে, একটি ভারতীয় কোম্পানি এই অ্যাপলবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। ওই কোম্পানির কমপক্ষে ১১৮টি ভিন্ন ভিন্ন অফশোর (দেশের বাইরে অবস্থিত) ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা রয়েছে।প্যারাডাইস পেপারস-ভারত

দেশে তথ্য গোপন করে অফশোর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে অর্থ বিনিয়োগ করা ভারতের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কথাও প্রকাশ পেয়েছে প্যারাডাইস পেপারসে। এমনকি সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতো ভারতীয় সংস্থার তদন্তাধীন অনেক কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানও আছে অ্যাপলবাইয়ের ক্লায়েন্টের তালিকায়।

ফাঁস হওয়া তথ্য অনুসারে, বলিউড কিংবদন্তী অমিতাভ বচ্চন বারমুডায় প্রতিষ্ঠিত একটি ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার। ২০০০-০১ সালে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কৌন বানেগা ক্রোরপতি’র প্রথম সিজনে উপস্থাপনার পর এই বিনিয়োগ করেন তিনি। অমিতাভ বচ্চন ও সিলিকন ভ্যালি ভেঞ্চারে বিনিয়োগকারী নাভিন চাড্ডা ২০০২ সালের ১৯ জুন জালভা মিডিয়া লি. নামের ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হিসেবে নাম লেখান। প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালের ২০ জুলাই বারমুডায় স্থাপিত হয়। আবার ২০০৫ সালেই বন্ধ হয়ে যায়।

ভারতীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কোম্পানি হ্যাভেলস ইন্ডিয়া’র ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে ৫০টিরও বেশি ঝুলন্ত অফশোর সহপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার বেশিরভাগেরই কর প্রদানের কোনো হিসেব নেই। প্রথমে আইল অব ম্যানে হ্যাভেলস হোল্ডিংস লি. প্রতিষ্ঠার পর একটা পর্যায়ে হ্যাভেলস মাল্টা নামে ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়া জুড়ে ৫২টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান খোলে কোম্পানিটি, যেখানে ১৪ কোটি সাড়ে ১২ লাখ ইউরোর বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হয়।

প্যারাডাইস পেপারস-ভারতবলিউড তারকা সঞ্জয় দত্তের স্ত্রী দিলনাশিন সঞ্জয় দত্ত মান্যতা একাই বাহামায় নিবন্ধিত নাসজয় কোম্পানি লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো পদ অধিকার করে ছিলেন। মান্যতার এক মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, ভারতের আয়কর আইন, ১৯৬১ অনুসারে তার সব ধরণের আয়-ব্যয়ের হিসেব ঘোষণা করা আছে।

এছাড়া তালিকায় ফোর্টিস-এসকর্টস-এর চেয়ারম্যান ড. অশোক শেঠ, কর্পোরেট লবিস্টর নিরা রাদিয়া, ওয়ান্টেড অপরাধী বিজয় মাল্যর প্রাক্তন মালিকানাধীন কোম্পানি ইউনাইটেড স্পিরিটস লি. ইন্ডিয়া, ইউপিএ সরকারের সাবেক ইউনিয়ন মন্ত্রী ভীরাপ্পা মৈলির ছেলে হর্ষ মৈলি, বিজেপি এমপি রবীন্দ্র কিশোর সিনহা, রাজস্থানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত, সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের ছেলে কার্তি চিদাম্বরম, সাবেক ইউনিয়ন মন্ত্রী শচীন পাইলট, বর্তমান সিভিল এভিয়েশন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিনহাসহ আরও অসংখ্য রাজনীতিক এবং খ্যাত-কুখ্যাত ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে। যাদের কেউ কেউ নামের ব্যাখ্যা দিলেও অধিকাংশই এখনো চুপ।