মানুষ এখন তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। প্রায় সব ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনেই থাকে। তথ্য নিরাপদে রাখতে ব্যবহার করা হয় পাসওয়ার্ড। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধার সঙ্গে বড় অসুবিধা হলো নিজের সিকিউরিটি অথবা পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি যাওয়া।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকগুলো পাসওয়ার্ডের বিকল্প নিয়ে ভাবছে। তবে কী হতে পারে সে বিকল্প?
লন্ডনের এক অভিনেত্রীর অনলাইন ভোগান্তির উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট করেছে বিবিসি। ইসাবেল নামক সেই অভিনেত্রীর একটি অনলাইন পরিচয় চুরি হয়ে যায় ২০১৭ সালে।
আমি একদিন বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার পোস্টবক্স ভাঙা-বলেন ইসাবেল।
তিনি বলেন, আমার দুটি নতুন ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন হয়, কিন্তু যার জন্য আমি আবেদন করিনি। ব্যাংক থেকে একটি চিঠি আসে আমার কাছে। যেখানে লেখা ছিলো, আপনাকে ক্রেডিট কার্ড প্রদানের বিষয়ে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছি।
ইসাবেল নিজেই তার নামে জারি করা কার্ডগুলি ট্র্যাক করার চেষ্টা করে এবং ক্রেডিট চেকিং পরিষেবার জন্য খরচ করে ফেলেন ১৫০ ইউরো।
“এটি বিশাল পরিমাণের কাজ এবং অর্থ”।
বিবিসি বলছে, এভাবে পরিচয় চুরি যাওয়ার দিক থেকে যুক্তরাজ্য সর্বকালের উচ্চতম অবস্থানে আছে।যুক্তরাজ্যের জালিয়াতি প্রতিরোধ পরিষেবা সিআইএফএএস গত বছর এই সংক্রান্ত ১৯০,০০০ টি মামলা নথিভুক্ত করেছে।
মূলত ক্রমবর্ধমান ডিজিটালাইজড জীবন প্রতারকদের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য পেতে আগের তুলনায় সহজ করেছে।
ইদানিং পাসওয়ার্ড হ্যাক ও তথ্য চুরির অনেক সংবাদ উঠে এসেছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ফেসবুক স্বীকার করে যে, লক্ষ লক্ষ ইনস্টগ্রাম ব্যবহারকারীর পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়ে গেছে। গত বছরের শেষ দিকে প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইট কোওড়ার ১০ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর নাম ও ইমেল ঠিকানাসহ হ্যাক হয়। আর ইমেল ঠিকানা, সুরক্ষা প্রশ্নাবলী এবং পাসওয়ার্ডসহ ৩ বিলিয়ন ব্যবহারকীর ডাটা ক্ষতি সম্পর্কিত একটি মামলা সম্প্রতি নিষ্পত্তি করেছে ইয়াহু।
এই শঙ্কাজনক অবস্থায় মাইক্রোসফট গত বছর জানায় সংস্থাটি বায়োমেট্রিক্স বা একটি বিশেষ সুরক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসবে। প্রতিষ্ঠানটি পাসওয়ার্ডমুক্ত পণ্যের দিকে ঝুঁকছে।
আইটি গবেষণা সংস্থা গার্টনার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ২০২২ সালের মধ্যে বড় ব্যবসা এবং প্রায় সব মাঝারি আকারের কোম্পানি পাসওয়ার্ডের ওপর তাদের নির্ভরতা অর্ধেকে কমিয়ে আনবে।
পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে সুরক্ষা দেওয়া এবং ভুলে যাওয়া পাসওয়ার্ডগুলো পুনরায় সেট করতে আইটি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলোকে মূল্যবান সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। এই ক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড নিয়ে কর্মরত প্রতি কর্মচারীর জন্য প্রতি বছরে প্রায় ২০০ ডলার (১৫০ ডলার) ব্যয় হয়। একটি বৃহৎ সংস্থায় এটি সত্যি উল্লেখযোগ্য ব্যয়।
এই সমস্যা মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন এক পরিকল্পনা করেছে। ‘আপডেটেড পেমেন্ট সার্ভিসেস ডাইরেক্টিভ’ তথা ‘পিএসডি-২’ নমের এই নিয়মে কোনো গ্রাহকের পরিচয় প্রমাণ করার সময় কমপক্ষে দুটি ফ্যাক্টর ব্যবহার করতে হয়। এই ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক কার্ড অথবা তার জ্ঞাত একটি পিন, বা তারা এমন কিছু হতে পারে যা বায়োমেট্রিক্সের অন্তর্ভুক্ত।
২০১৯ কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবাল ব্যাংকিং জালিয়াতি জরিপ অনুসারে, ৬৭% ব্যাংক নিজেদের তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট, ভয়েস প্যাটার্ন এবং মুখের স্বীকৃতির মতো শারীরিক বায়োমেট্রিক্সগুলিতে বিনিয়োগ বাড়ছে।
সর্বশেষ স্মার্টফোনগুলির সাহায্যে এখন আমরা অনেকেই আমাদের পকেটে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার বহন করি। ডিলয়েটের গবেষণায় দেখা গেছে যে, যুক্তরাজ্যের এক পঞ্চমাংশ লোক স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যান করতে সক্ষম এবং এই সংখ্যাটি দ্রুত বাড়ছে।
তবুও আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারদের জন্য সহজ হয়ে যাচ্ছে। বায়োমেট্রিকের তথ্যও চুরি করা যেতে পারে।
এই বিষয়ে সেপ্টেম্বরে সাংহাইয়ের একটি সাইবার সিকিউরিটি সম্মেলনে চীনা গবেষকরা দেখান যে, কয়েক মিটার দূরে তোলা ছবি থেকেও আঙ্গুলের ছাপ ধরা সম্ভব।
এরপর কি বায়োমেট্রিক্স পাসওয়ার্ডের বিকল্প হতে পারে?
মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা বুনকের চিফ এক্সিকিউটিভ আলী নিকনম এমনটা মনে করেন না।
তার মতে, বায়োমেট্রিক্স পাসওয়ার্ডের বিকল্প হবে বলে মনে হয় না। এক্ষেত্রে সংমিশ্রিত ফ্যাক্টরগুলো পাসওয়ার্ডের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার হতে চলেছে। আমরা আছি। আমাদের এটির দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এই ধরনের মাল্টি ফ্যাক্টর প্রমাণীকরণ চিহ্নগুলোও অধিকতর সুরক্ষিত করতে হবে।