চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

নারীর জন্য চাই নিরাপদ সাইবার জীবন

KSRM

গ্রুপের পুরো নাম Desperately Seeking Uncensored। মানুষ ওখানে ডেসপারেট হয়ে Uncensored খুঁজে বেড়ায়। নারীবিষয়ক অনলাইন পোর্টাল Womenchapter এ একটি লেখা দিয়েছিলাম। “DSU: অনলাইনে যৌনবিকৃতদের আখড়া” নামে। তারপর থেকে আমিও ছিলাম এই গ্রুপের ভিকটিম। কিন্তু আমি চুপ থাকিনি-প্রতিবাদ করিনি। সেই গল্পই জানাচ্ছি আজ আপনাদেরকে।

এই লেখার শেষে এটাও বুঝতে পারবেন আসলে বাংলাদেশে ডিজিটাল আইন থেকে শুরু করে বহুক্ষেত্রে সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। হচ্ছে না বলেই পার পাচ্ছে কিছু অসাধু মানুষ। ফেসবুকের একটি আলোচিত গ্রুপ DSU (Desperately Seeking Uncensored)। গত ১২ই অক্টোবর গ্রুপটির তিনজন এডমিনকে ধরেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। কাল জানতে পারলাম গ্রুপের বাকি ১৮ জন অ্যাডমিনকে পুলিশ খুঁজছে।

Bkash July

১ লাখ ২২ হাজার মেম্বারের এই গ্রুপে প্রচুর রথী মহারথী, আইনজীবী থেকে সিআইডির অনেক পার্সোনালিটি কিন্তু ছিল। কোন কারণে তাদের এই গ্রুপের নোংরামি চোখে পড়েনি বা পড়লেও ততটা আমলে নেয়নি। আজ থেকে ছয় মাস আগে বাস থেকে এক মেয়ের বুকের ছবি পোস্ট দিলে এই গ্রুপ থেকে আমি লিভ করি। দেশের কোনো নারী নিরাপদ ছিল না এই গ্রুপ থেকে। তাই এই গ্রুপ আমার কাছে বিকৃতিদের আখড়াই!

মেডিকেলের দুইজন স্টুডেন্টের গোপন ভিডিও ফাঁস করে দেওয়া হয় কোন এক পর্ণ সাইটে। এটা নিয়ে প্রতিবাদ করা জরুরী ছিল। প্রেমিক প্রেমিকার একান্ত মুহূর্তের ভিডিও ফাঁস করে দেওয়া সাইবার হ্যারাজমেন্ট। অথচ সেদিকে না গিয়ে এই DSU গ্রুপ ভাইরাল করে দিতে থাকল ভিডিও। ভিডিও এর নাম দিল “৮ মিনিট”। ভিডিও ভাইরাল হবার পর মেয়েটা সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছিল জানা যায়।%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%a7%e0%a7%a7

Reneta June

তখনই আমি জানতে পারলাম, এরা ইচ্ছা করেই এই ধরণের ভিডিও ভাইরাল করে। শুধু ভাইরালই করে না। মিনিট অনুযায়ী ভিডিওগুলোর নাম দেয়! তারপর যে মেয়ের ভিডিও ছড়ায়, কোথাও তার সঙ্গে দেখা হলে ছবি তুলে বলে, “অত মিনিটের ভিডিওর মেয়েটির সঙ্গে দেখা হল”।

এসব দেখেই মূলত Womenchapter এ লেখাটা লিখি। কিন্তু যেটা হল DSU এর গ্রুপ আমাকে নিয়ে পড়ল। সেই কুৎসিত, নোংরা ভাষায় গালিগালাজ, খ ম দিয়ে অভিহিত করা সব চলল। একটু পর আমার আইডি নষ্ট করার ফাঁদ পাতা হল। Womenchapter website ডাউন করে দেওয়া হল।

তখন জাস্টিস ফর উইম্যান পাশে এসে দাঁড়াল। আমাকে নিয়ে এই গ্রুপের নোংরামির প্রমাণ নিয়ে মামলা করতে চলে গেলাম লোকাল থানায়। মামলা নিল না।  মামলার জন্য আমাকে থানার অপারেশন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হল। তিনি এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিলেন, “এসব মামলা থানায় হয় না। BTRC যান”।
BTRC এ তে গত এক বছরে যত ফোন দিয়েছি একজনও ফোন ধরেনি। এই কথা জানানোর পর তিনি শান্ত হলেন। আগেও এই থানা থেকে সাইবার ক্রাইমের উপর জিডি করেছি বলার পর আরেকটু শান্ত হলেন। তাও মামলা নিলেন না। সাধারণ ডায়েরি করেই আসতে হল।

এরপরের দিন আবার থানায় গেলাম। প্রথমবার একলা গেলেও এবার সঙ্গে ছিল জাস্টিস ফর উইম্যানের মেম্বার মাহাবুবুর ভাই। মামলা এবারও নিতে চাইল না। উপরন্তু আমাকে বলা হল, “মামলা করে কোনো লাভ আছে? এসব হইলে ফেসবুক অফ করে দেন”। আমি তর্ক শুরু করলে তিনি একপর্যায়ে মানেন এবং ওসির সঙ্গে ডিরেক্ট দেখা করার অনুমতি মিলে। থানার ওসির কাছে যা জানতে পারলাম, “৭টি মামলা থানায় পড়ে আছে। কোন অগ্রগতি নেই। BTRC এর সঙ্গে ফেসবুকের কোলাবরেশন নেই। তাই মামলা নিতে ইচ্ছুক না। যদি সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট অনুমতি দেয় তো মামলা গ্রহণ করা হবে”।cyber-crime-6

আমরা অনুমতি নিতেই ছুটি ডিএমপি এর হেডকোয়ার্টারে। সরাসরি কমিশনারের বরাবর আবেদন করা হয়। মাহাবুবুর ভাই-ই আমার করা জিডি আর তার সংগ্রহীত হাজার হাজার স্ক্রিনশটের প্রমাণ নিয়ে আবেদন করেন। তারপর অপেক্ষা । এরপর এলো সেই ১২ই অক্টোবর। আমার উপর সাইবার নোংরামির উপযুক্ত শাস্তি দিতে পেরেছি DSU কে। তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আরও এডমিন খুঁজছে পুলিশ। DSU গ্রুপ বন্ধ শীঘ্রই হবে। ভবিষ্যৎ ধর্ষক বানানো গ্রুপটির একটি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি আশা করছি। কিন্তু এই গ্রুপে এত যৌনবিকৃতির ইউজার। তাদের মাথা থেকে কি সাইবার নোংরামির বীজ উপড়ানো যাবে সহজে?

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, এই দেশে থানার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইন সংশ্লিষ্ট লোকজন ফেসবুক বুঝে না। ফেসবুকে যে কি প্রকারের নোংরামি হতে পারে জানা নেই। এই নতুন দিনের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর উপর মানুষের নির্ভরতা বাড়ছে। একে অস্বীকার করার জো কিছুতেই নেই। তাই এইখানে নিরাপত্তা দেবার জন্য এখন থেকেই কাজ করা উচিত।

বাংলাদেশের ডিজিটাল আইন পরিমার্জন করা উচিত। কারণ যত দিন যাচ্ছে নতুন সমস্যা আসছে। আর তা মোকাবিলা করতে নতুন আইন দরকার। এই দেশের তৃণমূল থানার কর্মকর্তাদের খুব ভালো করে সাইবার ক্রাইমটার উপর ট্রেইনিং দেওয়া উচিত। যাতে ফেসবুকে হয়রানি শুনে তারা কখনই না বলে, “ফেসবুক বন্ধ করে না দিতে”। খুব শীঘ্রই ফেসবুকের সঙ্গে BTRC এর একটি কোলাবরেশন করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন অবধি নারী সাইবারে নিরাপদ না সে তো বুঝলেনই। কিন্তু নারীও কি প্রতিবাদ করছে? প্রতিবাদ হলে বরং এই বিষয়গুলো আমলে পাবে আরও বেশি বেশি। আজ নিজ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার একটিই কারণ বহু মেয়ের ন্যুড ছবি দিয়ে ফেইক আইডি খুলে মেয়ের জীবন হতাশায় ভরিয়ে দেওয়া হয়। এইসব ক্ষেত্রে মেয়ে যাতে চুপ না থেকে লড়াইয়ে নামে।

লড়াইয়ের ময়দানে অনেককেই সে পাবে বিশ্বাস। আমিও একা ছিলাম। DSU আমাকে যে লাঞ্ছনা করেছিল, তার ক্ষোভ ছড়িয়ে দিতে পেরেছি সবখানে। তবে শেষ নয়! আমার এই লড়াই যদি আর একটা মেয়েকেও লড়াই করতে সাহস যোগায়! সেখানেই আমার সার্থকতা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

বিজ্ঞাপন