সারস কোভ-২ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং কোষের ভিতরে ঢুকে দুইটি প্রোটিনের সাহায্যে ভেঙ্গে যায়। এ প্রোটিন দুইটি হলো এসিইটু এবং টিএমপিআরএসএসটু প্রোটিন। এ পর্যন্ত অন্ত্র ও ফুসফুসের ভেতরে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে অনেক আলোচনাই হয়েছে তবুও গবেষকরা জিনের বহিঃপ্রকাশ পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, অন্যান্য সম্ভাব্য চিহ্নিত কোষ, যারা এসিইটু এবং টিএমপিআরএসএসটু প্রোটিন তৈরী করে তারা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে আছে।
তাদের মধ্যে হার্ট, ব্লাডার, অগ্ন্যাশয়, কিডনি এবং নাক। অনেক ক্ষেত্রে চোখ এবং মস্তিষ্কেও এ প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ধরনের কোষ পর্যাপ্ত পরিমাণে মানুষের শরীরে আছে। তাদের মধ্যে অনেকগুলো এপিথেলিয়াল কোষ, যারা যেকোনো টিস্যুর বাইরের দিক আবৃত করে রাখে।এতদিন আমাদের ধারণা ছিল যে, এই ভাইরাস শুধুমাত্র শ্বাসতন্ত্রকে সংক্রমণ করে। তবে নতুন দিক হলো সারসকোভটু ভাইরাস মানুষের শরীরের বিভিন্ন জায়গার কোষকে আক্রান্ত করতে পারে।
জুরিখ ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজিস্ট ফ্রাঙ্ক রাসটিজকা ল্যানসেটে বর্ণনা করেছেন,একটি ভাইরাসের ক্ষুদ্র অংশ কিভাবে রক্তনালীর এন্ডোথেলিয়ামে দেখা যায়।এন্ডোথেলিয়াম হলো একটা কোষের পাতলা আবরণ যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের রক্তনালীতে লাইনিং হিসাবে থাকে। এটা শুধুমাত্র একটি ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া নয় যেটা কিনা কোভিড-১৯ দিয়ে হয়।এটা এমন একটি অসুখ যা আমরা আগে কখনও দেখিনি।এটা ইনফ্লুয়েঞ্জাও নয়।এটা সবর্ত্রই রক্তনালীতে আঘাত করে এবং হার্টকেও করে।
১.২ মিলিয়ন প্রত্যেকটি কোষকে মানুষের টিস্যু হতে সিঙ্গেল সেল সিকোয়েন্সিং করে দেখা যায় এসিইউটু এবং টিএমপিআরএসএসটু রিসিপটর কোন কোষগুলো হতে তৈরী হয় এবং তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে। তথ্য বলে যে,শরীরের অনেক কোষই সারসকোভটু রিসিপটর দেখালেও ভাইরাসটি সব টিস্যুকেই সংক্রমিত করবেনা। রোগের জন্য রিসিপটরকে কোষগুলোতে অবশ্যই থাকতে হবে কিন্তু অবশ্যই রিসিপটর প্রকাশ থাকলেই রোগ হবেনা। যেমন-টার্গেট কোষ শুক্রাশয়ে থাকলেও এটা যে শুক্রাশয়কে আক্রান্ত করে এবং সংখ্যা বৃদ্ধি করে তার যথেষ্ট প্রমাণ এখনও নেই ।
মৃত ব্যক্তির টিস্যু থেকে নমুনা নিয়ে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ নিয়ে পর্যালোচনা করলে সংক্রমণমুক্ত কোষ,টিস্যু ও অঙ্গ সর্ম্পকে জানা যাবে। ধূমপান যারা করে তাদের এসিইউটু জিন উপরের শ্বাসনালীতে বেশী পাওয়া যায়। ফুসফুসের অন্যান্য কোষে কম পাওয়া যায়। চীন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বোঝা যায়,ধূমপায়ী ব্যক্তিদের খারাপ নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ১৪গুণ বেশী থাকে।
তথ্য থেকে দেখা যায় যে,ভাইরাস ছড়ানোতে নাকের এপিথেলিয়াল কোষ এবং এসিইউটু এবং টিএমপিআরএসএসটু এরা দায়ী।ভাইরাস কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যে ফ্লুইডটা নাকের রাস্তায় নিঃসৃত করে ,যখন কেউ হাঁচি দেয় সেটা ড্রপলেটের সাহায্য মুক্ত হয় এবং এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে সংক্রমণ করে।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়,এসিইউটু এবং টিএমপিআরএসএসটু নাক,অন্ত্র এবং ফুসফুসের কোষকে ট্রান্সক্রিপ্ট করে ।কিন্তু আরও দেখা যায় যে, প্রোটিন ইন্টারফেরন বাহিরে এসিইউটু প্রকাশ করার জন্য সংবেদন করে।মানুষের শরীর ইন্টারফেরন ব্যবহার করে সংক্রমণের সাথে লড়াই করার জন্য ।তাই এটা পরিষ্কার নয় যে,প্রোটিন কোভিড-১৯ রোগীর এর জন্য সুবিধিজনক অথবা ক্ষতিকর।
মার্টা গাগলিনা,মলিকুলার বায়োলজিস্ট বলেন, যেসব কোষ শরীরের বিভিন্ন অংশে এসিইউটু এবং টিএমপিআরএসএসটু তৈরী করে তার মানে এই নয় যে সেই কোষগুলো সংক্রমিত। বাস্তবিক অর্থে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংক্রমণ ফুসফুসে হয়। তাছাড়া চিকিৎসকগণ কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে দেখেছেন, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা হচ্ছে, যেগুলো হয়ত সরাসরি সারসকোভটু ইনফেকশন দিয়ে তৈরী নয়। যখনই মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তখনই শরীরের বিভিন্ন টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। যা কিনা ভাইরাস ইনফেকশনে পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)