মেছো বাঘকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রায়ই কিছু খবর আমাদের চোখে পড়ে। ‘অমুক এলাকায় মেছো বাঘকে পিটিয়ে হত্যা’, ‘তমুক এলাকায় মেছো বাঘ উদ্ধার’, ‘অমুক গ্রাম থেকে একটি মেছো বাঘকে আহত অবস্থা উদ্ধার করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর’, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমনই একটি খবর আজকেও চ্যানেল আই অনলাইনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে খাবার সংগ্রহ জন্য লোকালয়ে ঢুকে পড়া একটি মেছো বাঘকে গ্রামবাসী জোটবদ্ধ হয়ে পিটিয়ে হত্যা করে উল্লাসে মেতে উঠেছে। এরপর সেই বাঘটিকে ঝুলিয়ে রেখেছে তারা।
খবরে প্রকাশ, সন্দ্বীপে কিছু মানুষের কারণে দিনের পর দিন প্রাকৃতিক পরিবেশ উজার হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বন ধ্বংস হচ্ছে বন। এতে খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রাণীজগৎ। এ কারণে খাবার খোঁজে প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে কিছু বন্যপ্রাণী। কিন্তু সেই খাবার খেতে এসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের হাতে তাদেরকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে।
আমরা জানি, মেছো বাঘ খুবই নিরীহ একটি প্রাণী। সাধারণত এরা মানুষের উপস্থিতিতে পালিয়ে যায় অথবা লুকিয়ে পড়ে। তাই মানুষকে আক্রমণের রেকর্ড খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে খাবারের অভাবে লোকালয়ে এসে কখনো কখনো গৃহপালিত পশু কিংবা হাঁস-মুরগী ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া অন্য কোনো ক্ষতি মেছো বাঘ করে না।
তারপরও এরাই কেন বার বার হামলার মুখে পড়ে প্রাণ হারায়? অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনো ক্ষতি না হলেও শুধুমাত্র কৌতূহলের কারণে মেছো বাঘদের হত্যা করা হয়েছে। এটাই নিয়মিত চিত্র। বন্যপ্রাণী রক্ষায় আইনের কথা আমরা জানি। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ আইনের মতো এই আইনের সীমাবদ্ধতাও অনেক। সবচেয়ে বড় কথা মানুষ সচেতন না। আর এ জন্যই একই ঘটনা বার বার ঘটছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ২০০৮ সালে মেছো বাঘকে সংকটাপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করে তাদের রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না মেছো বাঘ হত্যা। এরই মধ্যে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এই প্রাণীট বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
আমরা মনে করি, শুধু আইন করে মেছো বাঘ বা অন্যসব বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে বাঁচানো যাবে না। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা। মানুষের একটু ভালোবাসায় রক্ষা পেতে পারে তারা।