মেয়র আনিসুল হকের প্রতি শোক-শ্রদ্ধায় একদিনের ছুটি পালনের পর গুলশান-২ এ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় ছিলো কর্মমূখর। মেয়রের শূন্যতায় তাঁর কার্যালয়ে কেমন পরিবেশ বিরাজ করছে, তা সরেজমিনে দেখতে মেয়র আনিসুল হকের চালু করা গুলশান এক নম্বরে ‘ঢাকার চাকা’ বাসের জন্য দাঁড়াতে হলো। মেয়রের শোকে এসি বাস সার্ভিসেও যেনো শোকের ছায়া, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় একটু দেরিতেই এলো বাসটি। গুলশান দুইয়ে ডিএনসিসি’র মূল কার্যালয়ের সামনে যেতেই দেখা গেলো বেশ কয়েকটি শোক ব্যানার, সেসব ব্যানারে হাসিমুখের মেয়রের সাদাকালো ছবি।
ভবনের ভেতরে একটি টেবিলের ওপর আনিসুল হকের হাস্যোজ্জ্বল ছবি ফ্রেমবন্দি, আর পাশেই একটি শোক বই। বইটিতে প্রিয় মেয়র-সহকর্মীর প্রতি শোক-শ্রদ্ধা মিশ্রিত মনের বিশালত্বের কথাগুলো ছোট-ছোট বাক্যে লেখা।
শোক বইতে প্যানেল মেয়র ওসমান গণি লিখেছেন,“…একটি আধুনিক, সবুজ এবং স্মার্টসিটির স্বপ্নদ্রষ্টা এই ক্ষণজন্মা মেয়রের চলে যাওয়া এই শহর ও দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ঢাকার নাগরিকগণ তাদের এই নগরপিতাকে চিরদিন স্মরণে রাখবেন।…”
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মেসবাহুল ইসলাম লিখেছেন,“দেশপ্রেমী,পরিবর্তনের রূপকার ও স্বপ্নদ্রষ্টা ক্ষণজন্মা পুরুষ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। মহান আল্লাহতালা তাকে জান্নাতবাসী করুন।”
মেয়র আনিসুল হকের গানম্যান এ এস আই সোলায়মান মিয়া লিখেছেন,“আমি স্যারের গানম্যান হিসেবে বলছি, মানুষ দুনিয়াতে অনেক আসছে, চলে গেছে, কিন্তু স্যারের মতো এইরকম মনের মানুষ পাইনি। আমি স্যারের মাগফেরাত কামনা করছি।”
শোক বইতে ডিএনসিসি’র নিরাপত্তা প্রহরী থেকে শুরু করে নতুন নিয়োগ পাওয়া শ্রমিক জানিয়েছেন হৃদয় নিঙড়ানো শ্রদ্ধা।
বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা থেকে ডিএনসিসি’র অভ্যর্থনার নিরাপত্তাকর্মী আমিনুল হক লিখেছেন,“মানুষ বেঁচে থাকে কর্মের উপর, বয়সের উপর নহে। ঠিক তেমনি আনিসুল স্যারতো চলেই গেছেন কিন্তু তিনি যেই কাজগুলো করে গেছেন সেই কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি আমাদের মাঝে চিরজীবন বেঁচে থাকবেন। আল্লাহ যেন তাকে বেহেসত নসীব করেন।… আমীন।”
নিজেকে হিসাব বিভাগের অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দেয়া মিন্টু মিয়া লিখেছেন,“রাতের পর যেমন একটি নতুন সকাল আসে তেমনি আমাদের মাননীয় মেয়র জনাব আনিসুল হক এসেছিলেন আমাদের জীবনে। তার এভাবে চিরতরে চলে যাওয়াটা আসলেই অনেক বেদনার ও কষ্টের। আমি একান্তভাবে অনেক শোকাহত। আল্লাহ তা’আলা যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমিন…।”
জগন্নাথ বর্মন রায় নামে ডিএনসিসি’র আরেকজন নিরাপত্তাকর্মী লিখেছেন,“একজন স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষের ভালো করার পরিকল্পনার রূপকারের অবসান হলো। একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ ইতি টানলেন। অসমাপ্ত রেখে পুরো নগরবাসীকে কাঁদিয়ে তার চলে যাওয়াকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি তাঁর জান্নাত কামনা করছি।”
ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের শূন্যতায় গম্ভীর পরিবেশ কার্যালয়ের নবম-দশম তলাতেও, তবে কাজে ব্যস্ত রাখা মেয়রের কর্মীরা কাজে ব্যস্ত থেকে শোকের সময় কাটাচ্ছেন। জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুনের কক্ষে গিয়ে দেখা গেলো ফার্মগেটে একটি আধুনিক সুবিধাসম্বলিত নাগরিক সেবার উদ্বোধনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখছেন। প্যানেল মেয়র ওসমান গণির বক্তব্য টাইপ করে লিখছেন,“ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সকল স্বপ্নের বাস্তবায়ন করবে।”
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র। শনিবার দুপুর ১:০০টায় বাংলাদেশ বিমান এয়ালায়েন্সের ০০২ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকা আনা হয়। এরপরে শনিবার বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে বিকাল ৫টার দিকে বনানী কবরস্থানে ব্যক্তি জীবনে সফল ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা আনিসুল হকের দাফন সম্পন্ন হয়।