বিদেশে থাকায় ’৭৫-এর ১৫ অাগস্ট প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। নানা প্রতিকূলতা আর জীবনের প্রতি হুমকি থাকার পরও ‘৮১ সালে দেশে ফিরে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান হয়ে। সেই থেকে বহুবার তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আর ভয়ংকর এক হত্যা চেষ্টা চালানো হয় ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। শেষের ঘটনার ১৭ বছর পর রোববার আদালত ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। একই ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় ৯ জনকে ২০ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। আমরা এখানে অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি; আলোচিত এ মামলাটির বিচারকাজ শেষ হতে দীর্ঘ ১৭ বছরেরও বেশি সময় লাগলো। এখানেই শেষ নয়, এরইমধ্যে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারিক আদালতেই শেষ করা সম্ভব হয়নি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারকাজ। এ মামলা সাক্ষ্য নিতেই কেটে গেছে প্রায় সাড়ে ৮ বছর। সর্বশেষ আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়া চলছে। এই অবস্থায় নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়; বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই মামলাটির রায় হবে। আমরা জানি, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে সেই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানও ছিলেন। হামলার পর থেকে জজমিয়া নাটকসহ বিএনপি-জামায়ত জোট সরকারের অপতৎপরতায় প্রতি পদে বাধাগ্রস্ত হয়েছে বিচারকাজ। মূলত এর বিচারকাজ শুরু হয় ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরের বছর। সেই সময় ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পর ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আদালতের নির্দেশে মামলাটির অধিকতর তদন্ত হয়। নতুন তদন্তে অভিযুক্ত হন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, ঘটনার সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, পুলিশের সাবেক তিন আইজি, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা-ডিজিএফআই ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা-এনএসআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ৩০ জন। এরপর ২০১২ সালে আবার শুরু হয় বিচারকাজ। এখানো চলছে। আমরা লক্ষ্য করেছি- এমন আলোচিত হত্যা বা হত্যা চেষ্টার বিচার না হওয়া অথবা বিচারে দীর্ঘসূত্রতায় একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। শেখ হাসিনার ওপর চালানো এ দুটি হামলা তার বড় প্রমাণ। আমরা মনে করি, অতিদ্রুত এ মামলার বিচারকাজ শেষ করে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চিরতরে বন্ধ করা হোক।