একদিকে পিএইচডি’র কাজ, অন্যদিকে আসন্ন গলফ টুর্নামেন্টে অধিনায়ক হিসেবে নিজ দলের জয় নিশ্চিত করা – দু’টো চাপ একসঙ্গে নিতে না পেরে ট্রেনের তলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
মাত্র ২৩ বছর বয়সী রাফায়েল ওচোয়া প্রথমে কেমব্রিজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এবং পরে অক্সফোর্ড থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে প্রথম শ্রেণীতে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পুরোপুরি মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। পিএইচডি প্রথম বর্ষের তিন ভাগের দু’ভাগই পেরিয়ে গেছে। ২০২১ সালে পুরোটা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা।
একইসঙ্গে আবার আসন্ন গলফ টুর্নামেন্টে জেতার উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
দু’টো একসঙ্গে চালাতে চালাতে এক পর্যায়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতায় ভুগতে থাকেন রাফায়েল। সবসময় অস্থির থাকা শুরু করেন তিনি। উদ্বিগ্নতা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে তার মনে আত্মহত্যার চিন্তা খেলা করতে থাকে।
তবে তখনো লড়াই করার সিদ্ধান্ত থেকেই চিকিৎসককে নিজের মানসিক চাপ ও যন্ত্রণার কথা জানান রাফায়েল। এবং কথা দেন, মনে যতই আত্মহত্যার চিন্তা আসুক, সেগুলো কখনোই বাস্তবায়ন করবেন না।
কিন্তু রাফায়েল নিজের দেয়া কথা রাখতে পারলেন না। সেজন্য ক্যাম্পাস থেকে ১১ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ডাইকটের কাছে অবস্থিত অ্যাপলফোর্ড রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যান তিনি। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন সামনে দিয়ে একটা ট্রেন যাবে।
স্থানীয় সময় রাত ৮.২৪ মিনিটে ২৫ থেকে ৩০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বেগে প্ল্যাটফর্ম অতিক্রম করা একটি রেলগাড়ির সামনে খুব কাছ থেকে হঠাৎ লাফিয়ে পড়েন রাফায়েল। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ঘটনার পর রাফায়েলের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে কিছু চিঠি পাওয়া যায়, যা থেকে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করে যে তিনি আত্মহত্যা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রেলওয়ে স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজেও দেখা যায়, রাফায়েল প্ল্যাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিন বগির ট্রেনটি খুব কাছে আসার পর হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি।
ঘটনাটি ২০১৬ সালের ২৬ এপ্রিল ঘটলেও এক বছরেরও বেশি সময় পর প্রকাশ করল পুলিশ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন দিক থেকে তদন্তের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চিত হওয়ার পর মেধাবী ছাত্র রাফায়েল ওচোয়ার আত্মহত্যা করার খবরটি প্রকাশ করা হয়।