রাজধানীসহ সারাদেশের বিশৃঙ্খল সড়কে বেপরোয়া চালকদের নৈরাজ্যে মানুষের মৃত্যুর মিছিল যখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে; তখন এই নৈরাজ্য এবং ট্রাফিক আইন না মানা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
এসব উদ্যোগের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হেলমেট ব্যবহার না করা মোটরসাইকেল আরোহীদের কোনো তেল পাম্প থেকে তেল না দেয়া এবং রাজধানীর প্রধান সড়কে লেগুনা চলতে না দেয়া। এর বাইরে নির্ধারিত স্থানে বাস দাঁড়ানো, চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ রাখা, মডেল ট্রাফিক সিসটেমসহ আরো কিছু উদ্যোগের কথা জানান পুলিশ কমিশনার।
মূলত সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী চলবে ট্রাফিক সচেতনতায় এ বিশেষ কার্যক্রম। এজন্য যেসব উদ্যোগ ডিএমপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে, নিঃসন্দেহে তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। যদিও তা বাস্তবায়নের পরই বুঝতে পারা যাবে এসব উদ্যোগ ঠিক কতটা কার্যকর।
তবে এরইমধ্যে একটি বিষয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলো রাজধানীতে লেগুনা বন্ধ করে দেওয়া এবং তার বিকল্প হিসেবে নতুন কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা না রাখা। আমরা জানি, রাজধানীতে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতে যাত্রীদের বড় একটা অংশ লেগুনার উপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় লেগুনা বন্ধ হলে তার বিকল্প কী হবে?
এটা ঠিক যে, বেশির ভাগ লেগুনারই ফিটনেস না থাকাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। রাজধানীর বাইরে বড় বড় দুর্ঘটনায় এই লেগুনায় থাকা যাত্রীরাই হতাহত হয়েছেন বেশি। তাই এসব বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও সঠিক বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আমরা চাই বিকল্প ব্যবস্থা না করে যেন তা বন্ধ করা না হয়। এজন্য এক বা দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে। তা হলে সবার জন্যই বিষয়টা সহজ হয়।
ঢাকা রিকশার শহরে পরিণত হয়েছে-এমন মন্তব্যও করেছেন ডিএমপি কমিশনার। তার দাবি, বাইরের অনেক রিকশা ঢাকায় চলাচল করছে। তা হয়তো অনেকাংশেই ঠিক। কিন্ত রিকশার চেয়েও বেশি সড়কে বিশৃঙ্খলায় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে তিনি কোনো কথাই বললেন না। অথচ যত্রতত্র পার্কিং আর সিএনজি স্টেশনগুলোর সামনের সড়ক বন্ধ করে রাখার সবচেয়ে বেশি দায় এই ব্যক্তিগত গাড়ির।
বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে গত ৫ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ‘ট্রাফিক সপ্তাহ-২০১৮’ ঘোষণা করেছিল ডিএমপি। কিন্তু তাতে কী খুব একটা কাজ হয়েছিল?
তবে নতুন এ উদ্যোগে আমরা আশা রাখতে চাই। আমরা মনে করি, সঠিক পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন করা গেলে অবশ্যই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।