ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির
ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা পরিকল্পনাকারী ভারতভিত্তিক এবং তাদেরকে খুঁজে বের করা বা ধরা
অসম্ভব বলে এক প্রতিবেদেন জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক ‘ডেইলি মেইল’। কারণ
হিসেবে পত্রিকাটি বলছে, হ্যাকারা গ্রুপটি খুবই বড় এবং এর কোনো হদিসও পাওয়া
যাচ্ছে না।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ৩৫টি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর বেশিরভাগটাই শেষ পর্যন্ত গিয়েছিল ফিলিপিন্সের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে। নানা পদক্ষেপের পর অল্প কিছু উদ্ধার হলেও বেশি ভাগ অর্থই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জড়িতদের একজন চীনা ব্যবসায়ী কিম অংয়ের কাছ থেকে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
এর আগে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তকারীরা তিনটি হ্যাকার গ্রুপের
সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়ার কথা জানান। বিশ্বজুড়ে আলোচিত সাইবার আক্রমণের তদন্তকারীরা
জানান, এ তিনটি গ্রুপের মধ্যে একটি পাকিস্তানের এবং অন্যটি নর্থ
কোরিয়ার।
বাংলাদেশ নিয়োজিত সিলিকন ভ্যালির সাইবার নিরাপত্তা
প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই’র তদন্তে এসব তথ্য মিলে বলে জানিয়েছিল বিশ্বের বাণিজ্য সংবাদ
বিষয়ক অন্যতম শীর্ষ সংস্থা ব্লুমবার্গ।
তবে অন্য হ্যাকার গ্রুপটি কারা এবং কোন দেশের, তা নিশ্চিত হতে পারেননি ফায়ারআই’র তদন্তকারীরা।
একটি সূত্র ডেইলি মেইলকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির আগে
এ নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছে হ্যাকাররা। আর এর পেছনে শুধু একজন
পরিকল্পনাকারী কাজ করেনি।
একটি সূত্র ডেইলি মেইল জানিয়েছে,
‘এই লোকগুলো ভারতীয়, হয়তো তারা প্রক্সি হিসেবে কাজ করেছে। এজন্যই তাদের
ধরা যাচ্ছে না। হ্যাকাররা সরাসরি ভারতের কেন্দ্র এবং কিছু উপকূল থেকে কাজ
করেছে। যদিও টেকনিক্যালি তাদের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না।’
ওই ব্যক্তি বলেন, ‘এরা সহজে অন্তরালে যায় এবং ২-৩ মিনিটের মধ্যে মিডিয়া ছেড়ে যেতে পারে।’
এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ম্যানিলা বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে। কিন্তু কাউকে সেভাবে তারা গ্রেফতার করেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলজিয়ামভিত্তিক বিশ্বব্যাপী আর্থিক মেসেজিং নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক সেবাদান প্রতিষ্ঠান সুইফট বিশ্বের ১১ হাজার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সুইফট সুবিধা দেয়। তাদের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত তৃতীয় ঘটনা। এর আগে ইকুয়েডর ও ভিয়েতনামে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। হ্যাকাররা ইকুয়েডরের টাকা হাতিয়ে নিতে পারলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সচেতনতায় ভিয়েতনামে ব্যর্থ হয় হ্যাকাররা।
এতে আরো বলায় হয়, এইরকম তিনটি ঘটনা ঘটার পরও সুইফট বলছে, তাদের মেসেজিং সিস্টেমে নিয়মের কোনো লঙ্ঘন হয়নি। তাদের এই কথার কারণে বিষয়টি জটিল মনে হচ্ছে। আর এটি অপরাধীদের সুযোগ করে দিচ্ছে।
গত সপ্তাহে ফিলিপিন্স সিনেটের এক শুনানিতে কিম বলেছেন, রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) ম্যানেজারের অনুরোধে দুজনের অ্যাকাউন্ট খোলার সময় একজন দোভাষী হিসেবে কাজ করছিলো, এর বেশি কিছু নয়। পরে ওই টাকা কোথা থেকে কীভাবে এসেছে তার কিছুই জানি না।
সুইফটের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে টাকা চুরির বিষয়ে তাদের কোনো ভুল বা গাফিলতির কথাও নাকচ করেছে সুইফট।
সুইফটের নির্বাহী পরিচালক অ্যালেন রায়েস বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পেছনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পক্ষগুলো যে সব সমস্যার কথা তুলে ধরছেন তার কোনোটির জন্যই সুইফট দায়ী নয়। সুইফটের অন্য সব ব্যবহারকারীর মতোই বাংলাদেশ ব্যাংক নিজে সুইফট নেটওয়ার্কের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য দায়বদ্ধ। এর মধ্যে পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন থেকে শুরু করে অন্য সব অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রয়েছে।
তবে দু’দিন আগে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো কথাও বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ড. ফরাসউদ্দিনও সুইফটের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়, রিজার্ভ হাতিয়ে দেওয়ার দায় সুইফটও এড়াতে পারে না।