বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সংক্রান্ত সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মামলা এখনও চলমান, তাই কোনো মন্তব্য করবো না।
বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আজ ১৮তম অর্থনৈতিক বিষয়ক ও ২২তম সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক সংক্রান্ত সভায় একটি এজেন্ডা এবং ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির সভায় ১৬টি প্রকল্পের বিপরীতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৬৮টাকা।
বৈঠক শেষে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চুরি হয়ে যাওয়া টাকার বিষয়ে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় গেছি। যারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বা আমাদের চিন্তায় যারা ছিল, তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। সেই মামলা এখনও চলমান। এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। সেজন্য আমি কোনো মন্তব্য করব না।
ভারতের কাছ থেকে টিকা নিতে না পারলে টাকা ফেরত আনা হবে কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দেখভাল করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তি অনুযায়ী কত দিন সময় নিয়েছিল সেটি দেখতে হবে। ভারতেরও টিকা প্রয়োজন। সেসব কারণ বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। অবশ্যই এটা ঠিক, তারা টিকা দিতে না পারলে টাকা ফেরত দেবেই।
সংসদীয় কমিটিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি সার্জিক্যাল মাস্ক ৩৫৬ টাকা দরে কেনা হয়েছে, এগুলো সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে। কেবিনেট কমিটি তদারকি করলে ২ থেকে ১০ টাকার মাস্ক কীভাবে ৩৫৬ টাকা দিয়ে কেনা হয়?
এমন প্রশ্নের জাবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে যেভাবে বরাদ্দ দেয়া হয় তেমনি তাদের ক্রয় করার সুযোগও আছে। তারা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে কিনতে পারে, সেই সীমা যখন অতিক্রম হবে তখন আমাদের কমিটিতে আসবে। তার আগে মন্ত্রণালয় যথাযথ কর্তৃপক্ষ, তাদের ক্রয়ের ক্ষমতা রয়েছে।
নতুন অর্থবছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ দেখছেন এবং নতুন অর্থবছরের পরিকল্পনা কী।
এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চ্যালেঞ্জ অনেক, চ্যালেঞ্জ নেই তা বলব না। আমরা চ্যালেঞ্জগুলোকে সবসময় সুযোগ হিসেবে চিন্তা করি। কারণ ইতিহাস থেকে দেখেছি অর্থনৈতিক দিক থেকে যখনই কোনো চ্যালেঞ্জ আসে তখনই সুযোগ অনেক বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে আছি। বছরের শুরুর তুলনায় শেষের দিকে সামষ্টিক অর্থনীতির গতিবিধি অনেক ঊর্ধ্বমুখী। অনেকেই ধারণা করেছিলেন প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব না, কিন্তু সেটা অর্জন করতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। রাজস্ব অর্জন ছিল প্রধান সমস্যা। রাজস্ব অর্জনে প্রবৃদ্ধি এখন ১৭ শতাংশ। রপ্তানিতেও ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। রিজার্ভের পরিমাণও ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে, এ মাসেই ৪৬ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলার, গত বছর ১৮ বিলিয়ন ডলার ছিল।
ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নে সামনে কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি এ বছর পৃথিবীর সব দেশই অনুসরণ করছে। আমাদের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ, ভারতের ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ, জাপানের ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, চীনের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ধনী অথবা ধনী নয়, উন্নয়নশীল অথবা উন্নত দেশের সবাই কিন্তু এই বাজেট ঘটতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে।