মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ও সচিব বিশিষ্ট লেখক মফিদুল হক বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি ও সচিব বিশিষ্ট লেখক মফিদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশে ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেই রাজনীতি করতে হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে। পশ্চিমাদেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের পন্ডিতরা এই বিচার প্রক্রিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। পাশাপাশি গণহত্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্তের ব্যাপারেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ইউরোপের অনেকগুলো সংগঠন এ বিষয় নিয়ে কাজ করছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় টরন্টোর ডেনফোর্থে রেডহট তন্দুরিতে টরন্টোর সুধী সমাজের সঙ্গে ওই আলোচনায় মফিদুল হক এসব কথা বলেন।
এতে লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। নতুনদেশ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর-এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক এজিএস নাসির উদ দোজা। সমাপনী বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজিজুল মালিক।
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, এই সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন এবং বাংলাদেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যক্তিরা প্রশ্ন ও মতামত তুলে ধরেন। এতে অংশ নেন প্রবীণ সংগঠন বিদ্যুৎ দে, বাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী সাজ্জাদ আলী, বিজ্ঞান লেখক স্বপন বসু, প্রজন্ম কানাডার ফারহানা আজিম শিউলী, সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সহসভাপতি সুধান রয় প্রমূখ।
গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত তিনটি দেশের গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিষয়ক আদালতের বিচারকদের একটি সম্মেলনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মফিদুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটি বাংলাদেশের জনগণের ন্যায় বিচারের অধিকার- রাইট টু জাস্টিস। এই জনঅধিকারের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরো বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের চলমান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন।
মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আইনের আওতায় যেটি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে প্রণীত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে আন্তর্জাতিকভাবে যে ন্যূরেমবাগ ট্রায়ালের কথা বলা হয়, সেটিও অস্থায়ী আইনে সামরিক বিচার ছিলো। সংসদ কর্তৃক পাশ করা কোনো আইন দিয়ে সেই বিচার হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে সংসদ কর্তৃক পাশ করা আইনের আওতায় বিচার পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৭৩ সালের ওই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরাও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানান মফিদুল হক।
দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি নিয়ে জাতিসংঘ বা পশ্চিমা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ড জাতিসংঘ অনুমোদন করে না, কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ আইন অনুমোদন করে। ফলে বাইরে শক্তির বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বরং বাংলাদেশে ৭১ এর গণহত্যার বিভিষীকাময় চিত্র তুলে ধরে তাদের সাথে দেনদরবার করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের এ ট্রাস্টি আরো বলেন, ৭১ এ সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের প্রশ্নে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়ই আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছিলো। জাতিসংঘ সচিবালয়ের কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু এবং ভুট্টোর সঙ্গে দফায় দফায় এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিচারের কাঠামো এমনকি বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও আলাপ-আলোচনা অনেকটা এগিয়েছিলো। এসবই হয়েছিলো জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায়ই জাতিসংঘের একধরনের স্বীকৃতি পেয়েছিলো।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ পশ্চিমাদেশগুলো এখন হেইট স্পিচ বা ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তব্য কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। কেননা তারা মনে করছে হেট স্পিচ হচ্ছে গণহত্যার জন্য উস্কানিমূলক তৎপরতা। জামায়াতে ইসলামের প্রচার প্রোপাগান্ডার পুরোটাই ‘হেট স্পিচ’ বা ঘৃণা উদ্রেককারী বক্তৃতা। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে তাদের বক্তব্য প্রচার করছে।
এজন্য জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।