অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ষষ্ট দফায় সাক্ষ্যগ্রহণ আজ (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শেষ হয়েছে। সকাল সাড়ে দশটায় এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে শুরু হয়। আদালত মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ১৫, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর ধার্য্য করেন।
আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের শুরুতে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ তার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন সিনহা মামলার ৯ জন আসামী তার আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিয়েছিল। স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেয়ার আগে সকল আসামিকে তিন ঘন্টা সময় দেয়া হয়েছিল। তারপর তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেন। একই ধরনের সাক্ষ্য দেন আরেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান সিনহা হত্যা মামলার তিনজন আসামির স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
আদালতের কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানান রাষ্ট্র পক্ষের প্রসিকিউটর পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম। তিনি জানান মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আগামী ১৫ ১৬ ও ১৭ নভেম্বর ধার্য্য করেন।
অপর দিকে আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত জানিয়েছেন এই মামলার ১২ জন আসামীকেই চাপে ফেলে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে গিয়ে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি নিয়েছেন। তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেননি। তাই তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন।
তিনি আরও জানান, তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে আসামি ওসি প্রদীপকেও মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দিতে চাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু ওসি প্রদীপ স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি দেননি। কারণ তিনি সিনহা হত্যা মামলায় জড়িত ছিলেন না।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় ওসি প্রদীপসহ এই মামলার ১৫ জন আসামিকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রমে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষগ্রহনের মধ্য দিয়ে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম আরো জানান, সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষীর তালিকায় রয়েছে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। এই দুই জন বিচারক সিনহা হত্যা মামলার ১৫ জন আসামীর মধ্যে ১২ জন আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
তিনি জানান, আদালতে দুই জন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের আরো চারজন সদস্যকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সময়ের অভাবে তাদের স্বাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী ধার্য্য দিনে তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন এই মামলায় এ পর্যন্ত ৫৯ জন সাক্ষী দিয়েছেন।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।