যে মুস্তাফিজুর রহমানকে আইপিএলে নিজের দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদে খেলানোর জন্য আশীষ নেহরা মরিয়া হয়ে আছেন, আইসিসি সেই মুস্তাফিজের বদলে নেহরাকে টি-২০ বিশ্বকাপের সেরা একাদশে রাখায় বিস্মিত ক্রিকেট দুনিয়া। মেলবোর্ন থেকে জ্যামাইকা আর ঢাকা থেকে ডারবান পর্যন্ত সব জায়গায় এ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এরকম বিস্ময়, সমালোচনা আর প্রশ্ন উঠার কারণ: এক ইকনোমি রেট ছাড়া এ বিশ্বকাপে আর কোনো কিছুতেই মুস্তাফিজের চেয়ে নেহরা এগিয়ে ছিলেন না। দিনশেষে তাই অনেকে মনে করছেন, একান্তই চক্ষু-লজ্জার কারণে আইসিসি মুস্তাফিজকে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রেখেছে। সম্ভব হলে তাকে একেবারেই বাইরে রেখে সেরা একাদশ নির্বাচন করতো আইসিসি।
সেরা একাদশ বাছাইয়ের জুরি কমিটিতে ছিলেন ছয়জন। পারফরম্যান্স ও পরিসংখ্যান বিচার করে একাদশ নির্বাচন করেছেন তারা। পরিসংখ্যানের হিসাবে একাদশে নিশ্চিতই জায়গা পান মুস্তাফিজ। কিন্তু, তারা এও বলেছেন, সবক্ষেত্রে পরিসংখ্যানকে আমলে নেওয়া হয়নি।
তাহলে কী আমলে নেয়া হয়েছে সেটাই এখন ক্রিকেট বিশ্বের প্রশ্ন।
এবারের বিশ্বকাপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নেহরা পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন, আর ইনজুরি থেকে ফেরার পর মুস্তাফিজ ম্যাচ খেলেছেন তিনটি। পাঁচ ম্যাচে ১৯ ওভার বল করে নেহরার উইকেট সংখ্যা পাঁচ। তিন ম্যাচে ১২ ওভার বল করে মুস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা নেহরার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ, ৯।
এই ৯ উইকেট নিতে মুস্তাফিজ রান দিয়েছেন ৮৬, অর্থাৎ তার গড় ৯.৫৫। অন্যদিকে নেহরার গড় ২২.৬, তিনি রান দিয়েছেন ১১৩।
আবার নেহরারা সেরা বোলিং ফিগার যেখানে ১/২০ সেখানে মুস্তাফিজের ৫/২২। বাংলাদেশের বোলিং সেনসেশন মুস্তাফিজের এ ফিগার এবারের টি-২০ বিশ্বকাপে সেরা বোলিং।
ম্যাচওয়ারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ এবং ভারত সুপার টেনে একই গ্রুপে থাকায় তারা এ পর্যায়ে একই দলগুলোর বিপক্ষে খেলেছেন। মুখোমুখি হয়েছেন নিজেদের মধ্যেও। তাই তাদের মধ্যে তুলনাটা আরো সহজ।
সেই বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, নেহরা এবারের বিশ্বকাপে খেলা পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতে একটি করে উইকেট পেয়েছেন। সুপারে টেনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেমন তার একটি করে উইকেট তেমনি সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও উইকেট সংখ্যা এক।
অন্যদিকে, ইনজুরির কারণে প্রথম পর্ব এবং সুপার টেনের প্রথম ম্যাচ না খেলা বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ইনজুরি থেকে ফিরেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই উইকেট নিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে নিয়েছেন আরো দুই উইকেট। আর শেষ ম্যাচেতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া পাঁচ উইকেট।
আর বিশ্বকাপ শেষে বোলিং পারফরম্যান্সের যে হিসাব তাতে দেখা যাচ্ছে তিন ম্যাচে মুস্তাফিজ আছেন ৭ নম্বরে যেখানে পাঁচ ম্যাচ খেলা নেহরার অবস্থান ২২।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধুমাত্র ইকনোমি রেটে এগিয়ে মুস্তাফিজের (৭.১৬ রান) চেয়ে এগিয়ে নেহরা (৫.৯৪)। শুধুমাত্র এই এক কারণে মুস্তাফিজকে দ্বাদশ খেলোয়াড় করে নেহরাকে সেরা একাদশে নেয়া কারণে সমালোচনা তাই এখন পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়।
আইসিসির সেরা একাদশ:
১. জেসন রয় (ইংল্যান্ড)
২. জোস বাটলার (ইংল্যান্ড)
৩. জো রুট (ইংল্যান্ড)
৪. ডেভিড উইলি (ইংল্যান্ড)
৫. কুইন ডি কক (সাউথ আফ্রিকা)
৬. বিরাট কোহলি (ভারত)
৭. আশিস নেহরা (ভারত)
৮. আন্দ্রে রাসেল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৯. স্যামুয়েল বদ্রি (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১০. মিচেল স্যান্টনার (নিউজিল্যান্ড)
১১. শেন ওয়াটসন (অস্ট্রেলিয়া)
দ্বাদশ খেলোয়াড়:
১২. মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)