আগ্নেয়াস্ত্র হয় বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন আকারের। প্রয়োজন, বৈশিষ্ট্য ও রুচি মাথায় রেখে এসব আগ্নেয়াস্ত্রের ডিজাইন করা হয়। নাটক-সিনেমায় আমরা এমন পিস্তলও দেখেছি যা নায়িকা বা খলনায়িকার ছোট ছোট পার্সেও এঁটে যায়।
কিন্তু হাতের তালুর চেয়েও ছোট, এমন কোনো অস্ত্র কি হতে পারে? হ্যাঁ, এবার তাই করে দেখিয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত আগ্নেয়াস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুইসমিনিগান কো.। কোম্পানির নামানুসারেই নতুন অস্ত্রটির নাম দেয়া হয়েছে সুইস মিনি গান।
তবে এই রিভলবারটিকে ‘মিনি’ না বলে মনে হয় ‘মাইক্রো’ বললেই ভালো হতো! কারণ অন্যান্য অস্ত্র, এমনকি বাকি সব রিভলবারের তুলনায়ও এর আকার যেনো একটু বেশিই ছোট।
মাত্র সাড়ে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও সাড়ে ৩ সেন্টিমিটার উচ্চতাবিশিষ্ট রিভলবারটি চওড়ায় মাত্র ১ সেন্টিমিটার। আর ওজন তো মাত্র ১৯.৮ গ্রাম।
তবে আকার-আকৃতিতে ছোট হলেও একে ‘ছোট’ করে দেখবেন না যেনো। এই ডাবল-অ্যাকশন রিভলবারটি আর সব বড় আকারের রিভলবারের মতোই সমান কার্যকর। তাই এটি জায়গা করে নিয়েছে গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট সক্রিয় রিভলবার হিসেবে।
২০০৫ সালে প্রথম তৈরি হয় এই রিভলবার। তখন থেকে খুব কম সংখ্যায় প্রস্তুত হয়েছে সুইস মিনি গান। রিভলবারটিতে ২.৩৪ মিলিমিটার রিমফায়ার জাতীয় বুলেট লাগে। এটিও সুইসমিনিগানেরই তৈরি। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম গুলির খেতাব পেয়েছে এই বুলেট।
সুইস মিনি গান ও এর বুলেটের নির্মাতা এবং সুইসমিনিগানের প্রতিষ্ঠাতা পল এরার্ড জানান, প্রতি রাউন্ড গুলি চালাতে অস্ত্রটির মাত্র ১ জুল শক্তি তৈরি করতে হয়। এতেই বুলেটটি প্রতি সেকেন্ডে ৪শ’ ফুট (১২১.৯২ মিটার) গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে ০.৭১ ফুট-পাউন্ড (১.০৬ মিটার-কিলোগ্রাম) শক্তির আঘাত হানে।
সুইস মিনি গান এখন পর্যন্ত তৈরি হয়েছে মাত্র ৩শ’টি। দামও কম না। স্টিলের তৈরি সি১এসটি মডেলটি ৬ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছর এই মডেলটি তৈরি হয় মাত্র ১শ’টি।
পল এরার্ড বলেন, ‘লঞ্চ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ৩শ’টি রিভলবার বিক্রি করেছি। এটি মূলত সৌখিন সংগ্রহে রাখার জন্যই মানুষ কেনে। এ পর্যন্ত বেশিরভাগ সুইস মিনি গান কিনেছেন মধ্য ও দূরপ্রাচ্যের সংগ্রাহকরা। তাই অর্ডার অনুসারে আমরা খুব কম সংখ্যায় এটি তৈরি করি – হয়তো বছরে ২৫টি স্বর্ণের আর ১শ’টি স্টিলের রিভলবার। একটি অস্ত্র পাওয়ার জন্য অর্ডার দিয়ে ছ’মাস অপেক্ষা করতে হয় ক্রেতাকে।’
উন্নত মানের সুইস ঘড়ি ও গয়না তৈরির প্রযুক্তি এবং দক্ষতার কারণে এতোটা সূক্ষ্ম হাতিয়ার তৈরি সম্ভব হয়েছে বলে পল জানান। হাতিয়ারটি খুব একটা মারাত্মক না হলেও কার্যকর একটি হাতিয়ার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে অস্ত্রটি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।