ঢাবি প্রতিনিধি: নটরডেম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সদ্য প্রয়াত ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তার ‘প্রবন্ধসমগ্র’ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রকাশনা উৎসব। শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রমেশচন্দ্র মজুমদার (আরসি মজুমদার) মিলনায়তনে আয়োজিত এই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে ‘লেখাপ্রকাশ’ এর ১২টি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত কবি-সাহিত্যিকদের পুরস্কৃত করা হয়।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক কামাল লোহনীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন: ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তার বিনম্র স্বভাবের ছিলেন। তিনি সমাজের মানুষের জন্য চিন্তা করতেন। তার চিন্তার প্রতিফলন আমরা তার প্রবন্ধে দেখতে পাই। দেশের মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় তাকে চিন্তিত করেছে। এক্ষেত্রে তিনি পরিবার থেকে মূল্যবোধের শিক্ষার কথা বলেছেন। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কীভাবে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় তিনি সর্বদা এ নিয়ে চিন্তা করতেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন: পৃথিবীতে কেউই চিরস্থায়ী নয়। সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে। আমরা পৃথিবীতে স্বল্প সময়ের জন্য বিচরণকালে যা করি তাই পরবর্তীতে তা অমূল্য স্মৃতি হিসেবে দেখা দেয়। ফাদার বেঞ্জামিন কস্তার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তার স্মৃতিগুলো আজ আমাদের সামনে স্মরণীয় হয়ে আছে।
সভাপতির বক্তব্যে কামাল লোহানী বলেন: মানুষ হিসেবে বেঞ্জামিন কস্তা ছিলেন বিনয়ী এবং জ্ঞানী। মানুষের মানবিকতাকে তিনি সম্মান করতেন। আমরা তার কাছে বিভিন্নভাবে ঋণী যেগুলো কখনও শোধ করার মতো নয়।
লেখাপ্রকাশের উদ্যোগে সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের জন্য কবি বিপ্লব ফারুককে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন: দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাহিত্যিকদের খুঁজে বের করে পুরস্কৃত করা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এরকম আন্তরিকতা সবার মাঝে দেখা যায় না। তিনি যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই একান্ত নিজ উদ্যোগে এ কাজ করছেন তা সত্যিই অনন্য।
জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন- কবিতায় বায়তুল্লাহ কাদেরী, উপন্যাসে ইসহাক খান ও মোহাম্মদ আলী মিয়া, আইন প্রবন্ধে সাঈদ আহমেদ, প্রবন্ধে ফাদার অমিয় মিস্ত্রী, গবেষণা প্রবন্ধে ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও সিএসসি, গীতিকবিতায় শাখাওয়াৎ শাওন, ছড়ায় নুরুল আলম কলি ও নাসির উদ্দীন তুসী, কিশোরগল্পে শাহজাহান আবদালী, ছোটগল্পে জয়নুল আবেদিন, বড়গল্পে শাহানা সুলতানা, ভ্রমণ সাহিত্যে ডা. কামরুল আহসান, কলামে রফিকুল ইসলাম রতন, রাজনৈতিক প্রবন্ধে এড. এস আকবর খান, অনুবাদে ড. শামীম আরা, প্রচ্ছদে অরূপ মান্দী, প্রবাসী কবিতায় শাকীল রিয়াজ, মরণোত্তর কবিতায় মুজাফফর আলী তালুকদার এবং প্রকাশনায় চারুলিপি।
বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন- কবিতায় আলী মুহম্মদ ফরহাদ, আবু মাসুম, শেখ সালাহউদ্দিন, দিলআরা ইসলাম ডেইজী, ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, সুমন আমীন, অর্পিতা ইসলাম, আলী আজম মিঞা, আশিক রায়হান চৌধুরী, ফারজানা করিম বাঁধন, আলম তারেক, আশরাফ কবির, শাহানশাহ সুলতান, আব্দুল হালিম ও হাফসা মাহমুদ। গীতিকবিতায় খন্দকার মো. আলী সম্রাট; গল্পে আয়েশা মাহমুদ মারলিন ক্লারা ও রুবী ইমেল্ডা গোমেজ; উপন্যাসে অয়ন্ত মালেক; গবেষণা প্রবন্ধে আবু মোমিন, আলী রেজা, মো. আকবর আলী, ফাদার দিলীপ এস কস্তা ও সিস্টার রেবা ভেরোনিকা ডি কস্তা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. শাকির সবুর, নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও সিএসসি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কবি আমিনুল ইসলাম, নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জমির হোসেন প্রমুখ।