এশিয়া কাপের অষ্টম ম্যাচে অন্যতম হাইভোল্টেজ ম্যাচে আজ মুখোমুখি বাংলাদেশ
ও পাকিস্তান। জিতলে কোনো হিসেব-নিকেষ ছাড়াই ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হবে
টাইগররা। তাই ক্রিকেটভক্তদের একটাই আওয়াজ ‘পাকিস্তান হারাও, ফাইনালে
যাও’।
ফাইনালে না যাওয়ার তেমন কোনো কারণ কী রয়েছে মাশরাফির দলের। ভারতের বিপক্ষে হারের পর সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু পরের ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে সেখান থেকে উত্তীর্ণও হওয়া গেছে। তবে বাংলাদেশের জন্য আসল শক্তির সঞ্চার করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়া জয়টা। এমন সাফল্যে বরাবরই বাংলাদেশ ‘অন্য বাংলাদেশ’ হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসী।
আজ পাকিস্তানেরও সেই বাংলাদেশকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর তেমনটা হলে সাম্প্রতিক পারফর্মেন্সের বিচারে এক উত্তাল বাংলাদেশের সামনেই পড়তে যাচ্ছে প্রায় ডুবন্ত পাকিস্তান।
প্রথম ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ভারতের কাছে খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে পাকিস্তান। পরাজয়ের শঙ্কা জেগেছিল আইসিসির সহযোগী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষেও। শেষ পর্যন্ত মিডল অর্ডার দুই ব্যাটসম্যান শােয়েব মালিক ও উমর আকমলের কল্যাণে এ যাত্রায় বেঁচে যায় পাকিস্তানিরা।
গত বছর এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন মুস্তাফিজুর রহমানের। এক ম্যাচের টি-২০ সিরিজে সেই ম্যাচে শহীদ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাফিজের উইকেট তুলে নিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজের আগমণ বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। আর গত কয়েক মাসে তো বিশ্ব তারকা বনে গেছেন মুস্তাফিজ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অসাধারণ জয়ের পর বাংলাদেশ যখন ফুরফুরে মেজাজে, ঠিক তখনই এলো দুঃসংবাদ। ডান পাঁজরে ব্যথা পেয়ে এশিয়া কাপটাই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সেরা অস্ত্র মুস্তাফিজের। তাই আজ মুস্তাফিজকে ছাড়াই নামতে হচ্ছে স্বাগতিকদের। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ আমিরের লড়াই দেখা থেকে বঞ্চিত হলো ক্রিকেটভক্তরা।
তবে দুখের মধ্যেও বাংলাদেশের জন্য সুখের খবর বয়ে এনেছেন তামিম ইকবাল। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাইল্যান্ডে থাকা দলের সহ-অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম দলের সাথে যোগ দিয়েছেন। সদ্য পুত্রসন্তানের বাবা হওয়া তামিম আবারও ওপেনিং করতে নামবেন।
তামিমের ফেরাটা অবশ্য বাংলাদেশের জন্য বেশ স্বস্তিরও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই, এক পাকিস্তানের বিপক্ষেও সব ফরম্যাটে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যানের নাম তামিম। সর্বশেষ পিএসএলেও দারুণ খেলে এসেছেন তিনি।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের কথা মাথায় রেখে আজ বাউন্সি উইকেট নাও রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উইকেট হতে পারে স্পিন-সহায়ক। আর সে অনুযায়ী দলে পরিবর্তন আসতে পারে।
মুস্তাফিজের জায়গায় তাই আবু হায়দার রনি নন, খেলতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে শক্তি বাড়াতে নূরুল হাসান সোহানের জায়গায় খেলানো হতে পারে নাসির হোসেনকে।
সোহানের জায়গায় কিপিংয়ে ফিরবেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল-হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো আছেনই, পাশাপাশি সাব্বির রহমানের লেগ স্পিন। সঙ্গে সানি-নাসির মিলে বেশ শক্তিশালীই হতে পারে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ।
মূল কথা বাংলাদেশকে জিততে হবে। রানরেটে অনেক এগিয়ে থেকে বাংলাদেশ ২ নম্বরে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হলেও অনেকেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচটাকে স্বাগতিকদের জন্য ‘অঘোষিত সেমিফাইনাল’ হিসেবে দেখছেন।
তবে বাংলাদেশের জন্য আশার কথা একটাই, শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের রানরেটে বেশ এগিয়ে। বাংলাদেশের তাই পাকিস্তানকে হারালেই কোনো সমীকরণের প্রয়োজন হবে না।
টি-২০ ফরমেটে জয়-পরাজয়ের হিসাবে পাল্লা পাকিস্তানের দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। এ পর্যন্ত আটটি টি-২০ ম্যাচ খেলে একটি মাত্র জয় এসেছে, সেটাও গত বছরে। তবে গত বছর এই পাকিস্তানকেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। তাই ওয়ানডের পারফর্মেন্সটা টি-২০তে রুপ দিতে পারলে উড়েই যাবে পাকিস্তান।
সর্বশেষ জয়-পরাজয়ের হিসেবে অবশ্য একই বিন্দুতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান। সর্বশেষ খেলা পাঁচ ম্যাচে উভয় দলই তিনটি করে ম্যাচ হেরেছে।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে লাইমলাইটে থাকবেন তামিম ইকবাল। পাকিস্তান সুপার লিগে ৬ ইনিংস খেলে ২৬৭ রান করা ইনফর্ম এই ব্যাটসম্যান আজ শুরুতেই ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারেন। যদি দলে সুযোগ পান তাহলে নজরে থাকবেন আবু হায়দার রনিও। ব্যাটিংয়ে ঝড় এই ম্যাচে ঝড় তুলতে পারেন সাব্বির রহমান। আর আরেকটি দুরন্ত ফিনিশিং দিয়ে দলকে ফাইনালে তুলে দিতে পারেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
এই ম্যাচে আরেকটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সাকিব আল-হাসান। আর মাত্র ৫৫ রান করতে পারলেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ১০০০ হাজার রান পূর্ণ করবে টাইগারদের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
আর পাকিস্তান দলে প্রতিযোগিতা হবে ওপেনার মোহাম্মদ হাফিজ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান উমর আকমলের মধ্যে। এই ম্যাচে ৩০ রান করতে পারলেও পাকিস্তানের হয়ে টি-২০তে উমর আকমলের সর্বাধিক রানের রেকর্ড টপকে যাবেন হাফিজ।
অার আকমলের নিজের স্কোর আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকছে। ৭৩ টি-২০ ম্যাচ খেলে আকমল করেছেন ১৫৫৯ রান। আর হাফিজের রান ১৫২৯। ফর্মে রয়েছেন আকমল। গত ম্যাচে আরব আমিরাতের বিপক্ষে হাফসেঞ্চুরি করে অপরাজিত ছিলেন পিএসএলে সর্বাধিক রান করা এই ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম তাদের বোলিং। দুরন্ত ছন্দে রয়েছেন পেসার মোহাম্মদ আমির। প্রথম ম্যাচে এক স্পেলেই ভারতীয়দের মনে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আর আরব আমিরাতের বিপক্ষ চার ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে সবচেয়ে কিপটা বোলারের খাতায় নাম লিখিয়েছন। দুই ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৫টি। আমিরকে ভালো সঙ্গ দিচ্ছেন অন্য দুই পেসার মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ ইরফান।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে প্রকৃতি বাধা হওয়ার কোনো আভাস এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়েদার ডটকমের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজও ঢাকার আকাশ ঝকঝকেই থাকবে।
সম্ভাব্য বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ মিথুন/নাসির হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, আবু হায়দার রনি, আল-আমিন হোসেন, আরাফাত সানি এবং নুরুল হাসান সোহান।
সম্ভাব্য পাকিস্তান দল: শহীদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), সারজিল খান, মোহাম্মদ হাফিজ, উমর আকমল, শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম/খুররম মঞ্জুর/খালিদ লতিফ, সরফরাজ আহমেদ, আনোয়ার আলী/মোহাম্মদ নওয়াজ, ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ ইরফান।