প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা এবং দুর্নীতির মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ মামলায় তার সঙ্গে একুশে টিভির সাবেক দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকার পরও কেন আবার সাংবাদিকসহ তার বিরুদ্ধে গেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো? রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি তাপস কুমার পালের কথায় সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়। তিনি বলেন: ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারিতে হওয়া মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা পরোয়ানা জারির এই আদেশ দেন। আদালত আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
রাষ্ট্রোদ্রোহের মামলায় তারেক রহমানের সঙ্গে যে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন- একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সাবেক প্রধান প্রতিবেদক মাহাথীর ফারুকী খান ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কনক সারওয়ার। মামলার অপর আসামী একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জামিনে রয়েছেন।
যে প্রেক্ষাপটে এ পরোয়ানা
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি লন্ডন থেকে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্য একুশে টিভি সরাসরি সম্প্রচার করে একুশে টেলিভিশন। এই বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের অনেক মীমাংসিত বিষয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করা হয়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি টিভি, সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকাসহ সব ধরনের প্রচার মাধ্যমে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ না করার নির্দেশনা চেয়ে ৬ জানুয়ারি নাসরিন সিদ্দিকী লিনা নামের এক আইনজীবী একটি রিট করেন। রিটে পলাতক আসামিদের বক্তব্যও প্রচার না করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিটে বলা হয়, তারেক রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নানা অপরাধমূলক কথা বলছেন। যা দণ্ডবিধি অনুসারেও অপরাধ। এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছেন। এছাড়াও তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি শান্তিভঙ্গ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছেন বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়ে।
৭ জানুয়ারি ওই রিটের শুনানি শেষে তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া এ আদেশে বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা যতদিন পর্যন্ত বিচারাধীন থাকবে ততদিন কোনো বক্তব্য ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রচার করতে পারবে না।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে কারণে পরোয়ানা
একুশে টিভিতে বক্তব্য প্রচারের পরদিন ৬ জানুয়ারি তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের মালিক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চায় তেজগাঁও থানা পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর তেজগাঁও থানায় এসআই বোরহান উদ্দিন ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় এ মামলা করেন।
তদন্ত শেষে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তারেক ও সালামের সঙ্গে একুশে টেলিভিশনের প্রধান প্রতিবেদক মাহাথীর ফারুকী খান এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কনক সারওয়ারের নাম যোগ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পরিদর্শক এমদাদুল হক।
অভিযোগে বলা হয়, লন্ডন থেকে তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের মধ্য দিয়ে আসামিরা ‘পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি প্রদর্শন, আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত সরকারের প্রতি ঘৃণা তৈরি করতে চেয়েছিলেন’।
এই প্রেক্ষাপটেই সোমবার অভিযোগ আমলে নিয়ে আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা তারেক রহমান এবং দুই সাংবাদিক মাহাথীর ফারুকী খান ও কনক সারওয়ারের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বিএপির প্রতিক্রিয়া
দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে ২৫ অক্টোবর বুধবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন: তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। যা সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানীমূলক।
তিনি বলেন: যে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতিকে সরকারি আক্রমণের শিকার হয়ে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, সেখানে বিরোধী দলের নেতারা সরকারের কী ধরণের নিষ্ঠুর আক্রোশের শিকার হবেন তা সহজেই বুঝা যায়।