পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় নিষিদ্ধ হচ্ছে নারীদের খৎনা করার বহু পুরোনো এবং বিশ্বব্যাপী সমালোচিত প্রথা। আইন করে প্রথাটি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া জাম্মেহ।
আইন প্রণয়নের পর তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর করা হবে বলেও জানান প্রেসিডেন্ট। তবে আইনটির খসড়া কবে হবে সে ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি।
ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা ‘এফজিএম’ নামের ওই পদ্ধতিতে নারীশিশুর যৌনাঙ্গ থেকে লেবিয়া ও ক্লিটোরিস নামের দু’টি অংশ কেটে অপসারণ করা হয়। অনেক সময় একে ‘মেয়েদের খৎনা’ও বলা হয়ে থাকে।
তবে এই পদ্ধতিটির কোনো স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নেই। বরং প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক এই পদ্ধতির ফল হিসেবে প্রায়ই একজন নারীকে পুরোটা জীবন অতিরিক্ত বা টানা রক্তপাত, ইনফেকশন, যৌনাঙ্গে প্রদাহ এবং বন্ধ্যাত্বের মতো নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হয়।
আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ১৩ কোটিরও বেশি নারী এফজিএম পদ্ধতির মধ্য দিয়ে গেছেন। আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেই প্রথাটি বহুল প্রচলিত। শুধু গাম্বিয়াতেই এই প্রথার অধীনে ৭৬ শতাংশ নারীর যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। বয়স নির্ধারিত না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের ওপর এফজিএম করা হয়। ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই গাম্বিয়ায় ৫৬ শতাংশ মেয়ের এফজিএম করা হয়ে যায়।
এফজিএম করা হলে নারীর যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়, ফলে তার সতীত্ব নিশ্চিত থাকে- এই বিশ্বাস থেকেই যুগের পর যুগ ধরে প্রথাটি আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি মূলত লিঙ্গ বৈষম্যের একটি ভয়াবহ রূপ ছাড়া আর কিছু নয়।
বহুদিন ধরেই এফজিএম প্রথার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনা চলে আসছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একে নারী ও নারীশিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বব্যাপী এ প্রথা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান একটি বৈশ্বিক প্রচারণা শুরু করে এফজিএম প্রথা বন্ধের দাবিতে। এর ফল হিসেবেই গাম্বিয়া সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা এলো।