স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী অনুযায়ী গণধর্ষনের পর হত্যার শিকার নারায়ণগঞ্জের কিশোরীর জীবিত ফেরত আসার প্রেক্ষাপটে তার বাবার করা অপহরণ মামলার সকল নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট।
ওই কিশোরী জীবিত ফেরত আসা, আবার তাকে হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর প্রেক্ষাপটে করা এক রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই তলব আদেশ দেয়। আজ আদালতে রিভিশন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
আজ আদালত তার আদেশে, আসামীদের জবানবন্দিসহ অপহরণ মামলার সকল নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠাতে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়ঢাল ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে এই মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক অপারেশন) আব্দুল হাইকে মামলার সিডিসহ আগামি ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে হাজির হতে বলেছেন এবং মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা (উপ-পরিদর্শক) শামীম আল মামুনকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ওই কিশোরীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় গত মঙ্গলবার হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন, মো.জোবায়েদুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. আল রেজা আমির এবং মো.মিসবাহ উদ্দিনের পক্ষে রিভিশন আবেদন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, বাদী ও আসামিকে রিভিশন মামলায় বিবাদি করা হয়। ওই রিভিশন আবেদনে ওই কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় তার বাবার করা অপহরণ মামলার নথি তলবের পাশাপাশি অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং মামলাটির বৈধতা এবং যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। আজ ওই রিভিশন আবেদনের শুনানি নিয়ে নথি তলবের আদেশ দিলেন হাইকোর্ট।
গত মঙ্গলবার রিভিশন আবেদনের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরচ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ওই কিশোরীর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা হাইকোর্টে যে আইনী পদক্ষেপটা নিয়েছি, সেটি প্রচলিত কোন পদক্ষেপ নয়, এটি একটি ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ। কারণ, রিভিশন মামলা দায়ের করতে হয় সাধারণত কোনো রায় অথবা আদেশের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই রিভিশন আবেদনটি কোন রায় কিংবা আদেশের বিরুদ্ধে নয়, করা হয়েছে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার আইনী প্রেক্ষাপটে। যেহেতু আমারা জানি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে হাইকোর্ট তার রিভিশনাল পাওয়ার প্রয়োগ করতে পারেন। সেহেতু নারায়ণগঞ্জের ওই কিশোরীর ঘটনার বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদনটি করা হয়েছে।’
এর আগে নারায়ণগঞ্জের ওই কিশোরীর বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত ৪ জুলাই শহরের দেওভোগ এলাকার বাড়ি থেকে বের হয়ে ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়। তাকে না পেয়ে প্রায় মাসখানেক পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা।
সে মামলায় বলা হয়, আসামি আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উত্ত্যক্ত করতেন। এই মামলার পর পুলিশ ওই কিশোরীর মায়ের মুঠোফোনের কল লিস্ট চেক করে অটোরিকশা চালক রকিবের সন্ধান পায়। যে রকিবের নম্বর দিয়ে আব্দুল্লাহ ওই কিশোরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।
একপর্যায়ে পুলিশ অটোরিকশা চালক রকিব (১৯), আব্দুল্লাহ (২২) ও খলিলকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিল্টন হোসেন ও বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরবর্তীতে এই তিনজনকে কারাগারে নেয়া হয়।
তবে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ৪৯ দিন পর ওই কিশোরী তার বাড়িতে টাকা চেয়ে ফোন করলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ গত রোববার কিশোরীকে উদ্ধার করে। এরপর কিশোরীর স্বামী ইকবালকে আটক করা হয়। পরে ইকবাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছেন, ‘তারা বিয়ে করে বন্দর এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছিলেন।’