বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। রাজধানী থেকে দূরপাল্লার পরিবহন না ছাড়ার পাশাপাশি রাজধানীর ভেতরেও বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য বেরোলেও পথিমধ্যে চালকদের হতে হয়েছে ভোগান্তির শিকার। এমনকি অনেক যাত্রী ও চালকের মুখ, কাপড়ে গাড়ির ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েল (পোড়া মবিল) লাগিয়ে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা।
মুখে কালি মেখে হেনস্তা করা হয় ব্যক্তিগত গাড়ির চালকদের। কালি মেখে দেয়া হয় গাড়ি, কলেজগামী বাস ও বাসের শিক্ষার্থীদের গায়ে। এমনকি কালির হাত থেকে মুক্তি পায়নি রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও।
বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাধারণ জনতা।সামাজিক গণমাধ্যমেও এই নোংরামীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন সবাই।
একে অত্যন্ত গর্হিত কাজ হিসেবে উল্লেখ করে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত নাহিদ আনসারী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: একজনের মুখে কালি মাখার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি। একজন ড্রাইভার যে তার মালিকের চাকরি করে, সে সরকারের চাকরি করে না বা অন্য কারো চাকরি করে না, সেখানে তার মুখে কালি মেখে দেয়াটা একজন সভ্য নাগরিক হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
‘সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শিক্ষার্থীরা অান্দোলনে নেমেছিলো সেই প্রেক্ষিতে আইন প্রণয়ন হল তার ফলস্বরূপ শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে তা কোনোভাবেই তাদের জন্য সমবেদনা তৈরী করবে না। এখন যদি তাদের দাবি মেনে নেয়া হয় তাহলে তারা যা ইচ্ছে তাই করবে। তাদের কাছে পুরোপুরি জিম্মি হয়ে যাব আমরা।’
নাগরিক হিসেবে এই অরাজকতা গনদুর্ভোগ কোনোভাবেই মানতে পারছি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অমানবিক উল্লেখ করে স্টেট ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম, কমিউনিকেশন এ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের বিভাগীয় প্রধান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন: ‘গণতান্ত্রিক দেশের সাধারণ জনগণের সাথে এ ধরণের আচরণ মেনে নেয়া যায় না। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে এভাবে সাধারণ মানুষের মুখে, গায়ে কালি মেখে যান চলাচল বন্ধ রেখে তারা ভোগান্তি সৃষ্টি করতে পারে না। সাধারণ মানুষের উপর তাদের রোষ, ক্ষোভ প্রকাশ করার কোনো অধিকার নেই।’
যারা এ ধরণের কাজ করেছে তাদের শাস্তির দাবি করেন তিনি।
রায়হান আবেদীন নামে একজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে তাদের ভোগান্তিতে ফেলা কখনোই প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। এভাবে তারা মানুষকে জিম্মি করে যে কাজটি করছে তা ঠিক নয়।
মুখে কালি মেখে যেভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে রায়হান বলেন, এটা অত্যন্ত বর্বর একটা ঘটনা।
তবে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সকল বাধা উপেক্ষা করে রায়হান আজ ৬ জন যাত্রীকে বাইকে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। এ বিষয়ে রায়হান বলেন, ‘জানতে পারলাম শ্রমিকদের কর্ম বিরতির সুযোগ নিয়ে উবার পাঠাও চালকরাও এই সুযোগে এ্যাপ বন্ধ করে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দাবি করছেন। সেজন্য সাধারণ জনগণকে সহয়তা করতে রাস্তায় বাইক নিয়ে নেমেছি। তেল কালি মাখবে? মাখুক বাসায় এসে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলব।’
রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে এই পরিবহন ধর্মঘট। সকাল থেকেই মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ রয়েছে।
রোববার ভোর থেকেই দূরপাল্লার যাত্রীদের বাস টার্মিনালে বসে থাকতে ও হাঁটাহাঁটি করতে দেখা যায়। নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে না পেরে তারা অপেক্ষা করছেন টার্মিনালেই।
এছাড়াও কর্মস্থলসহ সকাল সকাল বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে গিয়ে বাস না পেয়ে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর সাধারণ মানুষ। অনেককেই কিছু পথ হেঁটে, কিছু পথ রিকশায়, এমনকি রিকশাভ্যানে করেও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দাবিগুলো হলো: সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা, ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, ওয়ে স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল করা এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা।
এর মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারা বাতিল করে জামিনযোগ্য করার বিষয়টি শ্রমিকদের মূল দাবি বলে জানানো হয়েছে।
অবশ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা পরিবহন ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম।