ঈদের আগে নানা কারণে ব্যাংকে নগদ টাকার উপর চাপ বাড়ায় সে চাপ সামলাতে ব্যাংকগুলোকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার (কলমানি মার্কেট) থেকে অর্থ ধার করতে হচ্ছে। অন্য বছরের চেয়ে পরিমাণের দিক থেকে এবার এর চাহিদা বাড়লেও সুদহার একেবারেই তলানীতে। গড় সুদ ২ শতাংশের নিচে। যা হার স্মরণকালে সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ আগস্ট সরবরাহ করা তথ্যে দেখা গেছে, কলমানিতে লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার কমানোর ফলে বাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বেড়েছে। এসব কারণে ঈদ উপলক্ষ্যে নগদ টাকার চাহিদা বাড়লেও কলমানিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
সাধারণত, নগদ টাকার সংকট হলে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে সাময়িকভাবে টাকা ধার নেয়। এক রাতের (ওভার নাইট) জন্য এ ধার দেওয়া হয়। ধার দেওয়া-নেওয়া কার্যক্রমকে আন্তঃব্যাংক কলমানি মার্কেট বলা হয়। নগদ টাকা ধারের চাহিদার ওপর এ মার্কেটের সুদহার ওঠানামা করে।
প্রতি বছরই ঈদের আগে গ্রাহকদের নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে কয়েকগুন। ফলে এ সময় অনেক ব্যাংকে নগদ টাকা সঙ্কট দেখা দেয়। এই সংকট মোকাবিলায় আন্তঃব্যাংক কলমানি বা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো।
নগদ টাকার সংকট বেশি হলে আন্তঃব্যাংক কলমানিতে বেশি সুদে অর্থ ধার করতে হয়। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরেই এ চিত্র আর দেখা যাচ্ছে না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৬ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কলমানি মার্কেটে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসাবে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক-টু-ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক-টু-ব্যাংকের গড় কলমানির গড় সুদহার ছিল ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় সুদহার ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গত এক দশকে এত কম সুদহারে লেনদেন হয়নি কলমানি মার্কেটে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবরে গড়ে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এ সময় সাধারণত ব্যাংক থেকে গ্রাহকেরা নগদ অর্থ তুলে নেয়। ফলে ব্যাংকগুলোতে সংকট দেখা দেয়। সেজন্য তারা কলমানি মার্কেট থেকে অর্থ ধার করে। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট নেই। সব ব্যাংকে কমবেশি তারল্য রয়েছে। এ কারণে লেনদেন বাড়লেও কলমানি মার্কেটে সুদহার বাড়েনি। বরং কমেছে।
২০১০ সালে কোরবানির ঈদের আগে কলমানি মার্কেটের সুদের হার প্রায় ২০০ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল। তখন বেসরকারি একটি ব্যাংক ১৯০ শতাংশ হার সুদে অন্য একটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা ধার নিয়েছিল। এরপর আর তেমন একটা বাড়েনি কলমানির সুদের হার।
২০১২ সালে ঈদের আগে ১৫ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। তারপর থেকে কলমানির সুদহার ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এখন একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে।