মঙ্গলবার শিকাগোতে ঐতিহাসিক বিদায়ী ভাষণে উপস্থিত মার্কিন নাগরিকদের গণতন্ত্র রক্ষা করতে বলেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র চালনার দায়িত্ব ট্রাম্প সরকারের হাতে যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে আগামী ২০ জানুয়ারি। প্রেসিডেন্ট ওবামা কেন একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র রক্ষা করার আহ্বান জানালেন সেটি অনেকের মতো আমাদের কাছেও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এতে আমেরিকা একটি অরক্ষিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কি না, সেটি ভেবে দেখার বিষয়। ট্রাম্প সরকারের হাত থেকে গণতন্ত্রের উত্তরণের কোন পথের ইঙ্গিত ছিলো কি এ ভাষণে, না ডেমোক্র্যাট সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ঘন্টাব্যাপী বক্তব্যে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। দুটো দিকই হয়তো সুকৌশলে তার ভাষণে এনেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দেশ যেখানে গণতন্ত্র এগিয়ে যায় বিশ্ব গণতন্ত্রে অনুপ্রবেশের ভেতর দিয়ে। এটি আমেরিকান জনগণেরও একটি পছন্দের বিষয়। সেই পছন্দের জায়গায় সে দেশের জনগণ এবার বেছে নিয়েছে ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। আমেরিকান রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাট থেকে রিপাবলিকানদের হাতে ক্ষমতার পালাবদলে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি ছিলো সবচেয়ে আলোচিত। নতুন করে ভেতরে ভেতরে একটা বড় মানসিক যুদ্ধের ময়দান তৈরি হয়েছে। সে ময়দানে আগামী চার কিংবা আট বছরে কে আসলে জনগণের মন জয় করতে পারবে সেটি এখন বিবেচ্য। বারাক ওবামা অবশ্য শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাই বলেছেন। আমেরিকায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য এটি, তাই তিনি মনে করেন। মঙ্গলবারের বিদায়ী ভাষণে ওবামা আরও একটি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন যা ছিল গত আট বছরে তার শাসনামলে আমেরিকার শক্তিশালী হয়ে ওঠার গল্প। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি, কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ উঠে আসে তার কথায়। তিনি বলেছেন, প্রায় সবদিক থেকেই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর থেকে এগিয়ে আছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামা। যে বিষয়টি আমাদের নজর কেড়েছে তা হলো যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার পরও এখনও সেখানে বর্ণবাদ রয়েছে। যা ওবামাও অকপটে স্বীকার করেছেন তার বক্তব্যে। এ নিয়ে আমেরিকাকে ভবিষ্যতে আরও কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করতে হলে আমেরিকার মতো একটি দেশকে আরও উদার হতে হবে। বিশ্ব রাজনীতির ওপর তারা যে কর্তৃত্ব জারি রাখতে চায়, সেসব বিষয় থেকে পেছাতে হবে। প্রতিটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় থাকে। সেখানে নাক-গলানোর যে প্রাচীণ সংস্কৃতি রয়েছে দেশটির এবং যে কারণে তারা সবচেয়ে সমালোচিত, সেই সব অবস্থান থেকেও বের হয়ে আসতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে, ট্রাম্প সরকার সে কাজটি কতোটা করবে, সে বিষয়ে অনেকের মতো আমরাও সন্দিহান। ৫৫ বছর বয়সী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যে পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ২০০৮ সালে, সেই প্রেসিডেন্ট মার্কিন জনগণকে অনুরোধ করলেন যেকোন বিষয় পারস্পরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য। আমরা মনে করি গণতন্ত্রের ওপর হুমকি যেকোন দেশের জন্যই ক্ষতিকর। সেটি আমেরিকা হোক, বা বাংলাদেশ, বা যেকোনো দেশ। আমরা চাই গণতন্ত্রের প্রকৃত চর্চা বাস্তবে প্রয়োগ হোক। এটি যেন শুধু কথামালার ফ্রেমে বাধা কোন রূপকথা না হয়।